বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘুরে দাঁড়াতে যত সমস্যা জাতীয় পার্টির

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সরকারের তিন বছরেও বিরোধী দল হিসেবে আস্থা অর্জন করতে পারেনি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা সরকারের সাজানো বিরোধী দল। জাতীয় পার্টি সরকারে আবদ্ধ। তাদের পক্ষে সত্যিকার অর্থে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন সম্ভব নয়। শুধু বিশ্লেষক নয়, বিদেশ থেকে বাংলাদেশ সফরে আসা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ তাদের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন না। এখানেই শেষ নয়, খোদ পার্টির শীর্ষ নেতারাও বলছেন জাতীয় পার্টি তিন বছরে সত্যিকার অর্থে কার্যকর বিরোধী দল হতে পারেনি। তবে পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ এখনো নেতা-কর্মীদের কাছে এককভাবে জনপ্রিয়। তার প্রশ্নে কর্মীরা আপসহীন। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সব প্রস্তাব জনগণ সমর্থন করে না। জনগণের এ বিরোধিতা সংসদে তুলে ধরাই বিরোধী দলের কাজ। কিন্তু জাতীয় পার্টি সরকারি দলের প্রস্তাবনার বিরোধিতা করে ‘না’ ভোট দিতে পারে না। সংসদের বিরোধী দল হয়ে মন্ত্রিপরিষদে থাকার কারণেই সংসদে বিরোধিতা করতে পারে না। যে জন্য বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির কার্যকর বিরোধী দল হওয়ার জন্য দ্বৈত ভূমিকা থেকে সরে আসা উচিত। এ বিষয়ে পার্টি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। জানা যায়, বহু চেষ্টা-তদবির করেও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে জাপা ব্যর্থ হয়। এতে পার্টির ভিতরে ও বাইরে চলে তোলপাড়। নেতারাই প্রশ্ন তোলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের কাছে বিএনপি যদি প্রধান বিরোধী দল হয় তাহলে জাতীয় পার্টির পরিচয় কী? এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরকালেও সাক্ষাৎ পায়নি জাতীয় পার্টি। দুই বছর আগে বিরোধীদলীয় নেতা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বৈঠকের আয়োজনের অনুরোধ করেন।

নিজের দলকে সত্যিকার অর্থেই বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে জোর চেষ্টা করে চলেছেন পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। সংসদে এবং সভা-সমাবেশে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করছেন তিনি। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জনগণ জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল মনে করে না। সরকারে আমাদের মন্ত্রিত্ব রয়েছে। দেশের জনগণ আমাদের প্রধান বিরোধী দল মনে করে না।’ জাতীয় পার্টি যেন প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে, সে জন্য সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের প্রতি আবেদন জানান। রওশনকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ বলেন, ‘আপনার কাছে আবেদন, জাতীয় পার্টি যেন প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে।’ এক বছর অতিবাহিত হলেও পার্টির চেয়ারম্যানের এ আবেদন আমলে নেননি বিরোধীদলীয় নেতা। প্রসঙ্গত, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী। প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, মশিউর রহমান রাঙ্গা সমবায় প্রতিমন্ত্রী।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জাপা নেতারা সরকারের বিরোধিতার পরিবর্তে সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিতে ব্যস্ত। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পার্টি ঘোষণা দিয়েছিল সংসদ বর্জনের রীতি ভাঙার। চিরাচরিত ধারণা পাল্টে নিয়মিত সংসদে যোগ দিয়ে সংসদকে প্রাণবন্ত করার ঘোষণাও ছিল শীর্ষ নেতাদের। এ ছাড়া সংসদে বিএনপির মতো বড় দলের শূন্যতা এড়াতে এবং কার্যকর ও সক্রিয় বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে প্রমাণ করার একটা তাগিদ ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকেও ছিল। পাশাপাশি সরকারের অবস্থান শক্ত রাখতে সংসদে সত্যিকারের আদলে একটা বিরোধী দলের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তাও ছিল বেশি। এমনকি জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের উপনেতাও নিয়োগ দিতে পারেনি। এ ছাড়া নবম সংসদ পর্যন্ত বিরোধী দলের সংসদ বর্জন যে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্য জনগণের মধ্যে সংসদীয় ব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের বীতশ্রদ্ধ ভাব তৈরি হওয়ায় সাধারণ মানুষের আস্থা হারায় বিরোধী দল। তাই এ রীতি পাল্টাতে ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত করতে। শপথের পরই বিরোধীদলীয় নেতা রওশন বলেছিলেন, তারা সংসদে থেকেই সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। কিন্তু গত তিন বছরে রওশনের নেতৃত্বে বিরোধী দল নানা বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করলেও একটিও ‘না ভোট’ দেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর