বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুর্নীতিবাজদের জন্য এ বছর হবে আতঙ্কের

—দুদক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতিবাজদের জন্য এ বছর হবে আতঙ্কের

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের জন্য চলতি বছর হবে আতঙ্কের। যেসব দফতরে অধিক দুর্নীতি হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে, সেখানে ফাঁদ পেতে দুর্নীতিবাজদের ধরা হবে। তিনি গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ ও সচিব আবু মো. মোস্তফা। সংবাদ সম্মেলনে দুদকের ২০১৬ সালের কার্যক্রম ও ২০১৭ সালের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিবাজদের এই বলে হুঁশিয়ার করেন, ‘ঘুষ গ্রহণ বন্ধ করুন। নইলে কঠিন পরিণতির জন্য অপেক্ষা করুন।’ ইকবাল মাহমুদ জানান, ফাঁদ পেতে দুর্নীতিবাজদের ধরার ঘটনায় ২০১৬ সালে ১৩টি মামলা হয়। ফাঁদ পেতে দুর্নীতিবাজদের ধরা এবং মামলার বিষয়টি চলতি বছর আরও বেগবান করা হবে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতিপ্রবণ দফতরগুলোয় বিশেষ নজরদারির বিষয়টি এবার দৃশ্যমান হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুদক ২০১৬ সালে ১২ হাজার ৫৬৮টি অভিযোগ পায়। এর মধ্যে অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয় ১ হাজার ৫৪৩টি। প্রশাসনিক ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয় ৫৪৩টি। ইকবাল মাহমুদ জানান, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দুদকে বেশি অভিযোগ আসে। কিন্তু অধিকাংশ অভিযোগ দুদকের তফসিলবহির্ভূত হওয়ায় তা অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। মামলা-সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৬ সালে ৩৩৯টি মামলা করা হয়েছে। অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে ৫২৮টি মামলায়। বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া দুদকের মামলার তথ্যে দেখা যায়, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সাজার হার বেড়েছে। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, বেসিক ব্যাংকের আত্মসাৎ করা ৩৫৯ কোটি টাকা ফেরত এসেছে। মামলার পর বেসিক ব্যাংকের ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে ৩৪২ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মামলা একটি বড় বিষয়। এ কেলেঙ্কারির ৫৬টি মামলার তদন্ত করতে হচ্ছে কমিশনকে। এজন্য সঠিক তদন্ত করতে কমিশনের সময় লেগে যাচ্ছে। এর মানে এই নয় যে, মামলা থেকে কেউ রেহাই পাবে। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৬টি মামলার চার্জশিট দিতে সময় লাগছে সঠিক তদন্তের জন্য। সঠিক তদন্তে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যেন যুক্ত না হয়, কিংবা কোনো অপরাধী যেন পার না পায়, সেদিকেও নজর রেখে তদন্ত করতে হচ্ছে কমিশনকে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মামলাগুলোর ১৫৬ জন আসামির মধ্যে ব্যাংকটির কর্মকর্তা ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে ৪৮টি, ডিএমডি ফজলুস সোবহানকে ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থকে ২৩টি এবং ডিএমডি এ মোনায়েম খানকে ৩৫টি মামলায় আসামি করেছে দুদক। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ বছর দুদকের গণশুনানি বাড়ানো হয়েছে। প্রতি মাসে তিনটি করে জেলা ও উপজেলায় দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শুধু তাই নয়, গুণশুনানি অনুষ্ঠানের তিন দিনের মধ্যে ফলোআপ শুনানি করা হবে, যেখানে দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই দুর্নীতির সব ঘাট বন্ধ করতে।’ এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করবেন জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতির কারণে এসডিজি অর্জনে সরকারকে পিছিয়ে পড়তে হয়। কেননা ২.৩ শতাংশ দুর্নীতির কারণে জিডিপি চলে যায়। অন্যদিকে ফৌজদারি মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো ফৌজদারি মামলার আসামি পার পাবে না। এজন্য দুদকের পাশাপাশি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি-বাণিজ্য বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি-বাণিজ্য হচ্ছে বলে দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য সম্প্রতি ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দুদক তলব করেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে দুদক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কেননা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি দুর্নীতি হয় তাহলে দুর্নীতি কোনোভাবেই রোধ করা যাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর