শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
ওয়েলিংটন টেস্ট

প্রথম দিনটা বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

১৩২, ১৩৫, ১৪৩ ও ১১৩- তিন অংকের সংখ্যাগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, জড়িয়ে থাকবে আজীবন। এসব কোনো ব্যক্তিগত ইনিংস নয়। দলগত। সবগুলোই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। ‘বাতাসের শহর’ ওয়েলিংটনের সবুজ ঘাসের উইকেট বেসিন রিজার্ভে। গতকাল তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, তখন অতীত স্মৃতিগুলো তাড়িয়ে বেরিয়েছে। ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশে যেখানে বিপর্যস্ত থাকার কথা ক্রিকেটারদের, সেখানে দারুণ উদ্দীপ্ত এবং আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে তাদের। বাতাসকে বশে এনে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে ব্ল্যাক ক্যাপস বোলারদের বিপক্ষে দারুণ লড়াই করেছেন তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক সৌরভ। দুজনের জোড়া হাফসেঞ্চুরিতে বৃষ্টিস্নাত প্রথমদিনে বেশ ভালো ব্যাটিংই করেছে বাংলাদেশ। তামিমের ৫৬ ও মুমিনুলের অপরাজিত ৬৪ রানে ভর করে ৪০.২ ওভারে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৫৪ রান। গতকাল বাতাস বেশ ভুগিয়েছে দুই দলকে। বেলস উড়ে  গেছে ৭-৮ বার। ব্যাঘাত ঘটে খেলায়। কখনো বাতাসে পলিথিন উড়ে এস উইকেটের সঙ্গে সখ্যতা গেড়েছে। এভাবেই পুরো দিনে খেলা হয়েছে ৪০.২ ওভারে। তামিম পুরোপুরি ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে। ধর তকমা, মার পেড়েক-মানসিকতায় ৫০ বলে ১১ চারে ৫৬ রান করে টিভি রিপ্লেতে সাজঘরে ফিরেন ইয়ান বোল্টের ইনসুইংয়ে। ৪৫ টেস্ট ক্যারিয়ারে এটা তামিমের ২০ নম্বর হাফসেঞ্চুরি এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ষষ্ঠ এবং টানা তৃতীয়। ২০১৪ সালে মিরপুর স্টেডিয়ামে দুই ইনিংসে তামিমের ব্যাট থেকে বেরিয়েছিল ৯৫ ও ৭০ রানের জ্বলজ্বলে ইনিংস। সঙ্গী তামিম যেখানে ছিলেন উজ্জ্বল, সেখানে ব্যর্থ হয়েছেন ইমরুল কায়েস। টিম সাউদির বাউন্সারে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ ইমরুল ক্যাচ দেন ডিপ ফাইন লেগে। ভালো খেলছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ২৬ রানের ইনিংসটি ছিল বেশ আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু হঠাৎই ‘অন দ্য রাইজ’ ড্রাইভ খেলতে যেয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন। এর আগে অবশ্য মুমিনুলের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৮৫ রান। যা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেট জুটিতে রেকর্ড। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন তরুণ ব্যাটসম্যান মুমিনুল। চতুর্থ ওভারে উইকেটে নেমে শেষ পর্যন্ত সাবলীল ব্যাটিং করেন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান।

 ২০ টেস্ট ক্যারিয়ারে এটা তার ১১ নম্বর হাফসেঞ্চুরি। ১১০ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংসটিতে ১০টি চার ছাড়াও রয়েছে ১টি ছক্কা। অপরাজিত ইনিংসটি আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীকে। আজ যদি তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ইনিংসটি খেলেই পেলেন, তাহলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেটা টানা তিন টেস্ট সেঞ্চুরি। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে ১৮১ রানের পর ২২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মুমিনুল। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন মিরপুরেও। প্রথম ইনিংসে ৪৭ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত থাকেন ১২২ রানে।

 ফলে আজ ৬৪ রানের ইনিংসটিতে যদি সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেন মুমিনুল, তাহলে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সোনালি হরফে লেখা থাকবে তার নাম। নিউজিল্যান্ডে মাটিতে অবশ্য ২০০র উপরে দলগত স্কোর রয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু বেসিন রিজার্ভে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর টাইগারদের। আগের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২০০৮ সালে, ১৪৩। ওয়েলিংটনে আগের দুই টেস্টের চার ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ছিল না কোনো পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস। সর্বোচ্চ ৪২ ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। কাল দুটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন তামিম ও মুমিনুল। এই দুই ইনিংসই নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালিকে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর