শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সমস্যার সমাধান সহজ হবে হাসিনা খালেদার বৈঠকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সমস্যার সমাধান সহজ হবে হাসিনা খালেদার বৈঠকে

সৈয়দ আবুল মকসুদ

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর নির্বাহী সদস্য ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, গণতন্ত্র ও জাতির স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এক টেবিলে বসতে হবে। নির্বাচন কমিশন প্রশ্নে যে সমস্যা তার সহজ সমাধান শুধু তাদের দুজনের বৈঠকেই হতে পারে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিতে হবে। এতে তিনি ছোট হয়ে যাবেন না। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবর শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বাসায় গেলেন তখন খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানানো উচিত ছিল। একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। রাজনীতি থেকে শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। এটি ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুজন আয়োজিত নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তার অভিমত ব্যক্ত করছিলেন। তার মতে, জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আগামী নির্বাচন কমিশন কেমন হবে তার ওপর। এই নির্বাচন কমিশন যদি গ্রহণযোগ্য ও দক্ষ না হয়, তাহলে আগামী নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে এবং তা জাতির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে। নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার ওপর সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করে। তিনি বলেন, আমরা সুজনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে আইন প্রণয়নের কথা বলে আসছি। আশার কথা যে, রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা করেছেন। সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে এ গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ। 

ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি আইন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তাদের পরিচয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  কোনো রাজনৈতিক দলের লোক অথবা রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ  দেওয়া উচিত হবে না। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে থাকাকালীন আইনের একটি খসড়া প্রণয়ন করেছিলাম। সে সময় যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম তারা সবাই এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। আমরা চিন্তাও করিনি যে পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বাস্তবতা এ রকম হয়ে যাবে। দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল সংসদে থাকবে না। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়।

 দলীয় লোকদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করলে তা ভালো হবে না। আলোচনা করে সময় নষ্ট না করে এখন আইন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন তিনি যদি একটি ভালো নির্বাচন কমিশন উপহার দেন তাহলে জাতি আরও খুশি হবে। রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে প্রধানমন্ত্রীকে কী পরামর্শ দিয়েছেন তা জানতে পারলে ভালো হতো। 

সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের বিষয়ে আইন প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি যে ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন, তাদের মধ্যে বিএনপি ছাড়া সবাই আইন প্রণয়নের কথা বলেছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের অংশীদার সরকার এবং রাজনৈতিক দল। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনই মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করে থাকে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারের সহায়তা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন স্তরের জনগণকে নিয়ে সার্চ কমিটি করা প্রয়োজন। বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্য  কোনো কমিশনারকেও সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা  যেতে পারে। তবে সার্চ কমিটিকে স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের আকার বড় হলে ভালো হয় না। এটি ছোট করতে হবে।

আলোচনায় মূল প্রবন্ধে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তবে এই নিয়োগ হতে হবে ওই বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে। তবে দুর্ভাগ্যবশত সংবিধান রচনার ৪৬ বছর পরও এমন একটি আইন কোনো সরকারই প্রণয়ন করেনি। তাই সংবিধান নির্দেশিত এ আইনটি প্রণয়ন করা আজ জরুরি। কারণ, আইন প্রণয়ন না করে আবারও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে এবং জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া যেহেতু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে আগামী সাধারণ নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে হবে বলেই মনে হয়, তাই যথাযথ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও মেরুদণ্ড সম্পন্ন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করা প্রয়োজন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ হলেও তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারে, তাহলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইস্যুসহ নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম চালু করা ঠিক হবে না।  কেননা ইভিএম অযোগ্য ও অদক্ষ লোকদের কাছে গেলে এর অপব্যবহার হতে পারে। তাই আরও ভেবেচিন্তে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর