শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অনেক রেকর্ড এক টেস্টে

দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৫৪২/৭

মেজবাহ্-উল-হক

অনেক রেকর্ড এক টেস্টে

রেকর্ড গড়ার পর একই ফ্রেমে সাকিব ও মুশফিক —এএফপি

বেসিন রিজার্ভের গ্যালারিতে হয় তো হাতে গোনা কয়েকজন ছিলেন বাংলাদেশি সমর্থক। টিভি ক্যামেরায় ঘুরেফিরে ওই কয়েকজনকেই বার বার দেখাচ্ছিল। কিন্তু সাকিব আল হাসান যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন তখন বোঝা যায় গোটা স্টেডিয়ামই যেন বাংলাদেশের পক্ষে। গ্যালারির সব দর্শক দাঁড়িয়ে সাকিবকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এ জন্যই বুঝি ক্রিকেট খেলাকে ‘ভদ্রতার প্রতীক’ বিবেচনা করা হয়। ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা ঘটলে সমর্থকরা পক্ষ-বিপক্ষ ভুলে নায়কের সুরে ‘কোরাস’ ধরেন। শুধু নায়ক নন, বেসিন রিজার্ভে সাকিব যেন এক মহানায়ক! যে স্টেডিয়ামে এর আগের ইনিংসে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৪৩ মাত্র। সেই একই মাঠে গতকাল সাকিব একাই করলেন ২১৭ রান। মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে করলেন ৩৫৯। টাইগার ক্যাপ্টেনের ব্যাট  থেকেও আসে ১৫৯ রান। সাকিব-মুশফিকের মহাকাব্যিক জুটিতে দ্বিতীয় দিন শেষে ওয়েলিংটন টেস্টে ৭ উইকেটে ৫৪২ রান করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের লাগাম শক্ত হাতে ধরার পাশাপাশি দুই তারকা রেকর্ডে রেকর্ডে রাঙিয়ে দিয়েছেন বেসিন রিজার্ভ। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসকেও সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটিং নিউক্লিয়াস। সাকিব-মুশফিকের ৩৫৯ রানের জুটি যে কোনো দলের বিরুদ্ধে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস মিলে গড়েছিলেন ৩১২ রানের জুটি। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পঞ্চম উইকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের জুটি। তবে প্রতিপক্ষের মাটিতে পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিকের জুটিটি দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। এর আগে ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ ও গ্রেগ বিলওয়েট মিলে করেছিলেন ৩৮৫ রান। গতকাল সাকিব-মুশফিক মিলে ৪৪ বছরের এক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। বিদেশি কোনো দলের হয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তারা গড়েছেন সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে এই রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের আসিফ ইকবাল ও মুস্তাক মোহাম্মদের। ১৯৭৩ সালে ডানেডিনে চতুর্থ উইকেটে ৩৫০ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। তবে এই জুটি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ১৯৯১ সালে মার্টিন ক্রো ও অ্যান্ড্রু জোনস মিলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে করেছিলেন ৪৬৭ রান। ২০১৫ সালে কেন উইলিয়ামসন ও বিজে ওয়াটলিং মিলে করেছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬৫* রানের জুটি। যে কোনোর দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ১৯৭৬ সালে লাহোরে পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান আসিফ ইকবাল ও জাভেদ মিয়াঁদাদ মিলে পঞ্চম উইকেটে ২৮১ রান করেছিলেন কিউইদের বিরুদ্ধে। শুধু জুটিতে নয়, সাকিবের ২১৭ রানের ইনিংসটিও রাঙিয়ে দিয়েছে রেকর্ডবুক। মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালের পর তৃতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের পক্ষে ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও এখন তার দখলে। সাকিব গতকাল বন্ধু তামিমের ২০৬ রানের রেকর্ডটি ভেঙে দিয়েছেন। আরেকটি বিরল রেকর্ড হয়েছে সাকিবের। টেস্টের ইতিহাসে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আলাদা সময়ে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান এবং সেরা বোলিং ফিগারের মালিক হওয়ার অনন্য গৌরব অর্জন করলেন। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৩৯ রানে ৮ উইকেট নিয়ে বর্তমানে সেরা বোলিং ফিগারের মালিক স্পিনার তাইজুল। তবে তার আগে ৩৬ রানে ৭ উইকেট নেওয়ায় রেকর্ডটি ছিল সাকিবের দখলেই। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সাকিবের এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ৫ ইনিংসে তার মোট রান ৪৫০। গড় ১১২.৫। এটিও একটি রেকর্ড। তবে হোমে ও বাইরে সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২ ইনিংসে ৭৭.৩৩ গড়ে ৬৯৬ রান করেছেন সাকিব। হাবিবুল বাশার ও তামিম ইকবালের পর বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন হাজারি ক্লাবেও নাম লিখিয়েছেন তিনি। আজ অপেক্ষা করছে আরও একটি রেকর্ড। ৫৪২ রানের সঙ্গে আর ৯৭ রান যোগ করতে পারলেই টেস্টের ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড হয়ে যাবে বাংলাদেশের। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় ৬৩৮ রান করেছিলেন টাইগাররা। তবে সে রেকর্ড হোক বা না হোক এখন একটাই প্রত্যাশা ওয়েলিংটন টেস্টে শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হাসুক বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর