শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাতীয় নির্বাচনে যেতে চাই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় নির্বাচনে যেতে চাই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন

মির্জা ফখরুল ইসলাম

বিরোধী দল নির্মূল প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা তো নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ একটি সহায়ক সরকার। যার অধীনে একটি নিরপেক্ষ, সাহসী, যোগ্য নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য তৈরি করতে হবে লেভেল প্লেইং ফিল্ড। বিরোধী দল নির্মূলের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। সব রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা অভিযোগে দায়ের সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের তিন বছরপূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের প্রতিক্রিয়া জানাতেই গুলশান কার্যালয়ে বিকালে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টর রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের অনেকাংশ জুড়েই ছিল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা। বিএনপি এখন সহায়ক সরকারের কথা বলছে। এর আগে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে। এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক আর সহায়ক সরকার একই বিষয়। যে যেটা বলেন।’ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাবেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা সংলাপ-সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছি। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ও নির্বাচন কমিশনের কাঠামো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।’ জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জঙ্গিবাদ প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করছে। দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করে কার্যকর ব্যবস্থা সময়ের প্রয়োজন। অথচ তা না করে বিরোধী দলকে দায়ী করে বিভক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গিবাদকে আরও প্রশ্রয় দিচ্ছে। প্রকৃত সত্য অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। ক্রস ফায়ার, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, পুলিশি হেফাজতে হত্যা, মিথ্যা মামলায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি—দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অসহনীয় করে ফেলেছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এসব সংকট চিহ্নিত করবেন। তা নিরসনের পথের সন্ধান দেবেন। সেটাই ছিল রাষ্ট্রনায়কোচিত কাজ। তিনি তা না করে রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বলেছেন। এটা হতাশাজনক।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। দেশের ভয়াবহ রাজনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তা চলছে। সংকট ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিরোধী দল কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ডেমোক্রেটিক স্পেস ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।  দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে উন্নয়ণের নামে বর্তমান সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত। আইনের শাসন অনুপস্থিত। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সরকারের রথি-মহারথিরা গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়ার নামে সব সামাজিক চুক্তি ভঙ্গ করে জনগণকে শৃঙ্খলিত করছে। উন্নয়নের নামে চলছে বল্গাহীন লুণ্ঠন।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতাদের মিথ্যা মামলার জালে জড়িয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তিনবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, বিচার বিভাগসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।’ লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘সভা-সমাবেশ করার সমান সুযোগ দিতে হবে। গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিতে হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাজনীতিকে স্বাভাবিক পথে চলতে দিতে হবে। উন্নয়নের কথা বলে গণতন্ত্রকে হত্যা করা যাবে না। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা জনগণ কোনো দিনই মেনে নেবে না। আমরা এখনো আশা করি, সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করার একদলীয় শাসন প্রবর্তনের ভয়ঙ্কর রাস্তা থেকে সরে গিয়ে গণতন্ত্রের মুক্ত পথে চলবে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবার জন্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আগামী নির্বাচন ও রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ এবং নতুন আশার আলো দেখাবে সরকার। অন্যথায় জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর