রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজীব গান্ধী রিমান্ডে

বাকিদের খুঁজছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজীব গান্ধী রিমান্ডে

গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সন্দেহে ভয়ঙ্কর জঙ্গি নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীকে (৩৩) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি দল শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করে বলে গতকাল একটি সংবাদ   সম্মেলনের মাধ্যমে দাবি করা হয়। সেখানে জানানো হয়, গুলশান হামলা ছাড়াও উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর হামলাসহ ২২টি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত রাজীব গান্ধী। গুলশান হামলা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশে গতকালই তাকে আট দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমানের জামাতা আবদুল আওয়ালের পাচক ছিল জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী। সেখান থেকে ধীরে ধীরে শীর্ষ জঙ্গি নেতায় পরিণত হয় সে। গুলশান হামলা ছাড়াও উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর হামলাসহ ২২টি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সে জড়িত। তিনি জানান, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে চালানো জেএমবির বোমা হামলার অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল আওয়ালের বগুড়ার আস্তানায় রান্না-বান্নার কাজ করত রাজীব। সেখান থেকেই বড় নেতাদের ইশারায় সেও ধীরে ধীরে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন তত্পরতা চালিয়ে ও অভিযানে অংশ নিয়ে এই রাজীবও এক সময়ে শীর্ষ জঙ্গি নেতাতে পরিণত হয়। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরিকল্পনাতেও সরাসরি অংশ নিয়েছিল জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী।

মনিরুল জানান, শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রাজীব গান্ধীকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে সিটিটিসি টিম। সে বিভিন্ন সময়ে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীর পাশাপাশি সুভাষ, শান্ত, টাইগার, আদিল, জাহিদ নামেও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, আবদুল আওয়ালের বার্তাবাহক হিসেবেও কাজ করত রাজীব। সারা দেশে জেএমবির হামলা মামলায় আবদুল আওয়াল গ্রেফতারের পর পাচক হওয়ার কারণে তখন রাজীবের নাম আসেনি। ওই সময় সে গোপনে দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে কাজ করায় রাজীবের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। জেএমবি নেতা আবদুর রহমান, মানিক (ভারতে অবস্থানরত), মামুনুর রশিদ রিপনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।

সূত্র আরও বলছে, ২০১১ সালে জেএমবি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ওই সময় রিপন-মানিকের সঙ্গে রাজীব কাজ করত। ২০১৪ সালের পর নব্য জেএমবির গঠন হলে রাজীবের যোগাযোগ হয় তামিম চৌধুরীর সঙ্গে। নব্য জেএমবিতে তার অবস্থান ছিল তামিমের পরের সারিতে। এ ছাড়া সে ছিল উত্তরবঙ্গের নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার এবং উত্তরবঙ্গে জেএমবি যেসব হামলা চালাত তা তার পরিকল্পনাতেই হতো। হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বিদেশি হত্যা ও শিয়া মসজিদে হামলাসহ ২২ মামলার আসামি এই রাজীব। গুলশানে হামলা চালানোর আগে জঙ্গিরা ভাটারার একটি বাসায় বসে হামলার পরিকল্পনার সময় সেখানে স্ত্রী-সন্তানসহ উপস্থিত ছিল রাজীব। গত বছর আজিমপুর থেকে গ্রেফতারকৃত তানভীর কাদেরির ছেলে তাহরিম কাদেরি তার জবানবন্দিতে রাজীবের নাম উল্লেখ করেছিল। গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় জড়িত শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ ও খায়রুল ইসলাম পায়েল ওরফে বাঁধনকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে রাজীবই সম্পৃক্ত করে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এই দুজনই পুলিশি অভিযানে নিহত হয়। এ ছাড়া শোলাকিয়ার হামলায় গ্রেফতার হওয়া শফিউলকেও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সে সম্পৃক্ত করে। পরে বন্দুকযুদ্ধে শফিউলও নিহত হয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান হামলার ঘটনায় তারা এই প্রথম এমন একজনকে আটক করলেন, যার কাছে এ হামলা সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে। যে সরাসরি হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল।

আট দিনের রিমান্ডে : গুলশান হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল বিকালে রাজীব গান্ধীকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চান তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসি’র পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসান তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  প্রসঙ্গত, রাজীবের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের পশ্চিমরাঘরপুর এলাকার ভূতমারী ঘাট এলাকায়। তার বাবার নাম মাওলানা ওসমান গণি মণ্ডল এবং মা রাহেলা বেগম। শুভ নামে তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্থানীয় একটি কলেজ থেকে সে এইচএসসি পাস করেছে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর