রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
নেতা-কর্মীদের প্রতি শেখ হাসিনা

আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয়, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো রাজনৈতিক কার্যালয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর বিকালে ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি কার্যালয়ের সবকিছুর খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কার্যালয় ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং স্টাফদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় করেন। এ সময় আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয় ইশতেহার তৈরির লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা সেল গঠন করতে তিনি উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের নির্দেশও দিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন ও বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। তিন বছর পূর্ণ করে সরকার চার বছরে পা রেখেছে। আগের নির্বাচনে আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার অধিকাংশই পূরণ করেছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির চেয়েও বেশি কাজ করেছি। আগামী নির্বাচনের আর বেশি বাকি নেই। আগামী নির্বাচনী ইশতেহার ঠিক করব। সেগুলো এখনই চিন্তাভাবনা করতে হবে।’ সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সূচনা বক্তব্যে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে আরও কঠিন সময় মোকাবিলা করতে হবে। তবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলতে হবে, সততা নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, একটা বিষয় মানুষকে জানাতে হবে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে লুটপাট হয় আর হাওয়া ভবন খোলে। মানুষ খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, লুটপাট ছাড়া বিএনপি কিছুই দিতে পারে না। মানুষকে এও বলতে হবে, সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের উন্নতি হবে না। নিজ কার্যালয়ে আসা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে দলীয় কার্যালয়ে এসেছি। যানজটে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে জনস্বার্থেই এখানে কম আসা হয়। তবে দলের কাজ করে যাচ্ছি। অনেক দিন এখানে আসি না। মনটা চাচ্ছিল এখানে আসি। তাই চলে এসেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সাল পর্যন্ত ইতিমধ্যে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। অনেকগুলো কিন্তু হয়ে গেছে। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে কী কী করণীয় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের কাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বের যেখানেই যাই অন্য দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরা বাংলাদেশের ‘দ্রুত উন্নয়ন’ কীভাবে হলো তা জানতে চান।’

ওয়ান-ইলেভেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে সময় সরকারি দলে যারা দুই দিন আগেও ছিল (বিএনপি-জামায়াত), ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তাদের বাদ দিয়ে আমাকেই আগে গ্রেফতার করা হলো। আমরা স্বাধীনতা এনেছি। অথচ দেখা যায় আঘাতটা সব সময় আমাদের ওপরই আগে আসে। যাক, সেই দুর্দিন কেটে গেছে। আমরা আলোর পথে যাত্রা করেছি। তবে আমাদের পুরনো দিনের কথাও মনে রাখতে হবে এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে দেখেছি, বাবার কাছ থেকে শিখেছি। মাকে দেখেও শিখেছি। আমার মাকে দেখেছি, তিনি অনেক আত্মত্যাগ করেছেন। কিন্তু কখনই কোনো জিনিসের জন্য আফসোস করেননি। বরং এই দলের জন্য তিনি নিজের গহনাটি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। সব সময়ই তিনি আমার বাবার পাশে পাশে থেকেছেন। প্রতিটি কাজেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করেছেন। আমিও তো সেই পরিবার থেকে এসেছি। আমাদের কাজই হচ্ছে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা।’

ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী দলের কেন্দ ীয় নেতৃবৃন্দ ও উপদেষ্টাদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানায়, সেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে আলোচনা করবো? যারা একুশে আগস্ট আমাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা করেছিলো, তাদের সঙ্গে? যারা আমার দলের অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে? সূত্র জানায়, এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নেত্রীর (খালেদা জিয়া) ছেলে মারা যাওয়ার পর আমি তাঁকে স্বান্তনা দিতে গেলাম। কিন্তু মুখের ওপর বাসার গেট বন্ধ করে দিয়ে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হলো না। আমাকে অপমান করা হলো। যারা সামান্যতম সৌজন্যবোধ জানে না তাদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? আর কোনো খুনির সঙ্গে তো আমরা সংলাপে বসতে পারি না। তারা তো আসলেই খুনী, তাদের হাতে তো মানুষের রক্ত। তারা কোন মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে?

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। বিএনপি অংশ নেবে কি নেবে না, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমরা কি বিএনপিকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিয়েছি? বিএনপি বাঁচানো প্রজেক্ট আমাদের না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইন করা হবে কি না দলের প্রবীন নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এত তাড়াহুড়া করে তো আর আইন করা যাবে না। তবে আমরা আইন করার সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আগামী নির্বাচন কমিশন যেন আইনের মধ্যে থেকে করা যায় সে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর