সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাত খুন মামলার রায় আজ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

সাত খুন মামলার রায় আজ

মামলার আলোচিত চার আসামি

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার রায় দেওয়া হবে আজ। নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে এ আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মামলার সর্বশেষ ধাপ উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত বছর ৩০ নভেম্বর রায়ের এ তারিখ ধার্য করেন আদালত।

সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ হয়েছে। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের      জামাতা বিজয় কুমার পাল এবং অপরটির বাদী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। মামলা দুটির চার্জশিটে ৩৫ জন অভিন্ন আসামি। তাদের মধ্যে ২৩ জন গ্রেফতার ও ১২ জন পলাতক আছেন। গ্রেফতার আসামিরা হলেন—নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা, র‌্যাবের সদস্য এসআই পূর্ণেন্দু বালা, এএসআই বজলুর রহমান, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, সিপাহি আবু তৈয়ব, সিপাহি নুরুজ্জামান, সিপাহি আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার। অন্যদিকে পলাতক আসামিরা হলেন—নূর হোসেনের সহযোগী ভারতে গ্রেফতার সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান ও জামাল উদ্দিন এবং র‌্যাবের আট সদস্য করপোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলী, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, এএসআই কামাল হোসেন ও কনস্টেবল হাবিবুর রহমান। দুটি মামলারই অভিন্ন সাক্ষী ১২৭ জন করে। তাদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১০৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। গত বছর ৮ এপ্রিল চার্জশিট দাখিল, ওই বছরের ১২ নভেম্বর ভারত থেকে নূর হোসেনকে দেশে আনা, আদালতে সাক্ষীদের প্রতি চোখরাঙানি, বাদীপক্ষকে হুমকি, অন্যতম আসামি র‌্যাবের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা তারেক সাঈদের অসুস্থতার ভানে হাসপাতালে ভর্তি, কাঠগড়ার ভিতর নূর হোসেনের মারামারিসহ অনেক নাটকীয়তা হয়েছে মামলা চলাকালে। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের তিন দিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার চার সহকর্মীকে হত্যার ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেন। অন্যদিকে সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় চন্দনের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় অপর মামলাটি করেন। প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে গত বছরের ৮ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মণ্ডল সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে একটি মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি তার মামলায় এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে বাদ দেওয়ায় এবং প্রধান আসামি নূর হোসেনের জবানবন্দি ছাড়া অভিযোগপত্র দেওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করে নারাজি আবেদন করেন। প্রথমে বিচারিক হাকিম আদালত এবং পরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত তা খারিজ করে দেন। এরপর সেলিনা ইসলাম বিউটি অধিকতর তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানালে আদালত শুনানি শেষে আদেশে বলেন, পুলিশ চাইলে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করতে পারে। একই সঙ্গে মামলাটিতে হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার ধারা যুক্ত করে বিচার করার জন্য জেলা ও দায়রা জজকে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৩ আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। র‌্যাবের আট সদস্যসহ পলাতক ১২ আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে পলাতক ১২ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে পাঁচজন আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর