সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে আখেরি মোনাজাত তুরাগ তীরে মুসল্লির ঢল

মোস্তফা কাজল, খায়রুল ইসলাম ও আফজাল, টঙ্গী থেকে ফিরে

মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা

মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে গতকাল বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা —রোহেত রাজীব

আখেরি মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনার মধ্য দিয়ে গতকাল ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে সমবেত লাখ লাখ মুসল্লি মোনাজাতের সময় দুই হাত তুলে আমিন আমিন ধ্বনি তোলেন। স্যাটেলাইট টিভি ও এফএম রেডিওগুলো ইজতেমাস্থল থেকে মোনাজাত সরাসরি সম্প্রচার করে। এ সময় দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজ নিজ ঘরে, অফিস, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিভি ও রেডিওর সামনে বসে মোনাজাতে শরিক হন। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই তুরাগ তীরে মুসল্লির ঢল নামে। ১৬০০ একর এলাকাজুড়ে ইজতেমাস্থল ছাড়াও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। যত দূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। বিপুলসংখ্যক মহিলা মুসল্লিদের অংশ নিতে দেখা যায়। এরই মধ্যে সকাল ১১টা ১ মিনিটে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। শেষ হয় বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে। ৩৪ মিনিট স্থায়ী আখেরি মোনাজাতের প্রথম ২০ মিনিট আল্লাহতায়ালার প্রশংসা, নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ, কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া-সংবলিত আয়াত এবং হাদিসে উল্লিখিত ফজিলতপূর্ণ দোয়াগুলো পাঠ করা হয়। গত শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইজতেমার ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো মাইকে বয়ান ও তরজমার ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে। মোনাজাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা যার যার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ফরিয়াদ জানান আল্লাহর দরবারে। বারবার তওবা-ইস্তেগফার করে আত্মশুদ্ধি ও নিজ গোনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে নিরাপদে থাকার জন্যও প্রার্থনা করা হয়। মোনাজাতে দেশ-বিদেশের ২০ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে আয়োজক কমিটি মনে করছে। মোনাজাতে মাওলানা সাদ বলেন, হে আল্লাহ! আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দিন। আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো মার্জনা করুন। উম্মতে মুহাম্মদির পাপরাশি ক্ষমা করে দিন। আমরা পাপিষ্ট, আমরা অপরাধী, আমরা ভুলে যাই, আমরা ভুল করি; অনুগ্রহ করে আমাদের সব গোনাহ আপনি ক্ষমা করে দিন। এর আগে বিভিন্ন মেয়াদে তাবলিগের জন্য বের হওয়া জামাতের সাথীদের উদ্দেশে হেদায়েতি বয়ানও তিনি পেশ করেন। এদিকে ভোরের আলো ফোটার আগেই ইজতেমার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলিগলিতে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে অনেক মুসল্লি মহাসড়ক ও সড়কে অবস্থান নেন। তারা পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন। পার্শ্ববর্তী কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাসাবাড়ি, কলকারখানা, অফিস, দোকান ও যানবাহনের ছাদ এবং তুরাগ নদে নৌকায় অবস্থান নেন মুসল্লিরা। ইজতেমার তিন দিনের বয়ান শুনতে মুসল্লিদের বেশির ভাগ প্রথম দিনই তুরাগ তীরে সমবেত হন। মোনাজাত শেষে ট্রেন, বাস, বিভিন্ন যানবাহন এবং অনেকেই হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দেন মুসল্লিরা। চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের সব আয়োজন।

ভিআইপিরা কে কোথায় : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনের দরবার হলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে গণভবন থেকে ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারের সুবাদে তার গুলশানের বাসভবন থেকে মোনাজাতে অংশ নেন। এ ছাড়া শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে স্থাপিত জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে বসে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল মোনাজাতে অংশ নেন। এ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ও বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়। ট্রেনের ভিতরে জায়গা না পেয়ে অনেক যাত্রীকে ছাদে ওঠে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে ফিরতে দেখা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আশুলিয়া ও টঙ্গী কালিগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায়  মুসল্লিরা  মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। গাজীপুরের ভোগড়া থেকে টঙ্গী, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকামুখী সড়ক শনিবার মধ্য রাত থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। একই সময় আশুলিয়া সড়কও বন্ধ ছিল। অনেক বাস-মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকে যানবাহনের স্বল্পতায় ভ্যানে যাতায়াত করেছেন।

ইজতেমা আয়োজক কমিটির সন্তোষ প্রকাশ : তাবলিগ জামাতের আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবারও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুসল্লিদের আসতে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। পাশাপাশি ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকায় সরকারের প্রতি ইজতেমা কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করে বলে জানান তিনি।

 

সর্বশেষ খবর