সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার মিসরের রাষ্ট্রদূতের নামে আনা রেঞ্জ রোভার গাড়ি আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার মিসরের রাষ্ট্রদূতের নামে আনা রেঞ্জ রোভার গাড়ি আটক

মিসরের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জতের ব্যবহার করা বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়ি আটক করেছে ঢাকার শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতর। গতকাল ঢাকার  বারিধারার কূটনৈতিক জোনের একটি বাড়ি থেকে গাড়িটি আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জত ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর গাড়িটি যথাযথ কর ও শুল্ক প্রদান ছাড়াই অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদ ও ইন্ট্রাকো গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ রিয়াদ আলীর স্ত্রী হুদা আলী সেলিম বেআইনিভাবে কূটনীতিকদের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত হলুদ নম্বর ব্যবহার করছিলেন। প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের গাড়িটিতে সাড়ে চার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মঈনুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দাদের একটি তদন্ত দল গতকাল সকালে বারিধারার ডিপ্লোমেটিক জোনের ১ নম্বর সড়কের ১১ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে ওই বাড়ি থেকে একটি সাদা রঙের রেঞ্জ রোভার ভোগ ২০১৪ মডেলের জিপ আটক করা হয়। হলুদ প্লেটের গাড়িটির নম্বর হলো দ-৬৮-০১৬। মিসরের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জত ২০১৬ সালে কূটনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে শুল্কমুক্ত বিলাসবহুল গাড়িটি আমদানি করেন। শুল্ক গোয়েন্দারা বলছেন, গাড়িটি অবৈধভাবে শুল্ক-কর পরিশোধ না করেই হস্তান্তর হয়েছে এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ব্যবহূত হয়ে আসছে। যুক্তরাজ্যে তৈরি তিন হাজার সিসির বিলাসবহুল গাড়িটির জন্য প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার শুল্ক প্রযোজ্য। গাড়ির ড্রাইভারের তথ্যানুসারে, প্রায় ছয় মাস ধরে হলুদ নম্বর প্লেটে গাড়িটি ব্যবহূত হচ্ছিল। আইনানুসারে, শুল্কমুক্ত কোনো গাড়ি বৈধভাবে হস্তান্তরিত হলে নতুন মালিকের স্ট্যাটাস অনুসারেই নম্বর প্লেট গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু ব্যবহারকারী হুদা আলী সেলিম ডিপ্লোমেটিক প্রিভিলেজ্ড না হওয়ার পরও হলুদ প্লেট ব্যবহার করছিলেন। প্রাথমিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানের তথ্যানুসারে, রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জত বেশ কয়েক মাস আগে ঢাকা ত্যাগ করলেও তার শুল্কমুক্ত গাড়ির বিষয়াদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়নি। আইনানুসারে, যথাযথ শুল্ক পরিশোধ ছাড়া এ ধরনের গাড়ি হস্তান্তর করা হলে তা সরকার বাজেয়াপ্ত করতে পারে। জানা যায়, শুল্কমুক্ত গাড়ির অপব্যবহার রোধে সাম্প্রতিক সময়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৩৯৫টি গাড়ি খুঁজে বের করা ও ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গাড়িগুলোর পাসবুক ফেরত দিতে বিদেশি উন্নয়ন-সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিচ্ছে সংস্থাটি। এর মধ্যে অনেক গাড়ি নজরদারিতে রেখেছেন শুল্ক গোয়েন্দা। ৯ জানুয়ারি উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক হ্যান সন ইকের মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা বিলাসবহুল রোলস রয়েস (ঘোস্ট মডেল) গাড়িটি জব্দ করা হয়। ১ জানুয়ারি গুলশান থেকে জব্দ করা হয় আইএলওর সাবেক কর্মকর্তা নিসকে জ্যানসেনের ব্যবহূত পাজেরো জিপ। এ কর্মকর্তা সম্প্রতি কম্বোডিয়ায় বদলি হয়ে গেছেন। ২২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সিনিয়র স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট কিশোর কুমার সিংয়ের ব্যবহূত হলুদ নম্বর প্লেটের গাড়ি জব্দ করা হয়। ২৮ নভেম্বর উত্তরা থেকে জব্দ করা হয় ইউএনডিপির সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান প্রিজনারের ব্যবহূত মিত্সুবিশি পাজেরো। প্রিজনার তার গাড়িটি ইউএনডিপির একজন বাংলাদেশি স্টাফের কাছে বিক্রি করে যান।

 

সর্বশেষ খবর