মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

তীরে এসে ডুবল তরী

মেজবাহ্-উল-হক

তীরে এসে ডুবল তরী

বাউন্সারে আহত হন মুশফিক

অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। কিন্তু মুশফিকরা যখন খেলবে হয়ে যাবে ‘ঘোর’ অনিশ্চয়তার খেলা! তা না হলে এমন ম্যাচও কেউ হারে! টানা চার দিন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় রেখেও শেষ দিনের শেষ ইনিংসে হতাশাজনক বোলিংয়ে হারতে হলো। তীরে এসে ডুবলো তরী। যেন নিউজিল্যান্ডকে জয়টি উপহার দিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রান করার পরও হেরে যাওয়ার রেকর্ড টেস্টের ইতিহাসে আর নেই। ক্রিকেটের ১২৩ বছরের পুরনো এক রেকর্ড ভেঙে নতুন এক লজ্জার রেকর্ড গড়লেন মুশফিকরা। ১৮৯৪ সালে সিডনি টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫৮৬ রান করেও ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। যদিও সেই ম্যাচের সঙ্গে টাইগারদের এই পরাজয়ের তুলনা চলে না, কেননা সেটা ছিল টাইমলেস যুগের টেস্ট। ওই ম্যাচটি চলেছিল ৭ দিন ধরে। বরং ৭ উইকেটের এই লজ্জার হারে পাকিস্তানকে ভারমুক্ত করে দিল বাংলাদেশ। আধুনিক যুগে পাঁচদিনের টেস্টে এমন লজ্জা এতদিন ছিল পাকিস্তানের। ১৯৭২ সালে প্রথম ইনিংসে ৫৭৪ রান করার পরও তারা হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। আবার অস্ট্রেলিয়া নিজেরাও একবার এমন লজ্জায় পড়েছিল। ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান করার পরেও ভারতের কাছে হেরেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের লজ্জা যেন সব লজ্জাকেই ছাড়িয়ে গেছে। যে ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে অবিস্মরণীয়, সেটি এখন সবচেয়ে বড় হতাশার গল্প। ব্যাটসম্যানদের বীরত্বে যে স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ, বোলারদের খামখেয়ালিপনায় তা নষ্ট হয়ে গেল। ম্যাচ শেষে মুশফিকুর রহিম ‘অনভিজ্ঞ’ বোলিং লাইনআপকেই দায়ী করেছেন। সেটাই স্বাভাবিক। নিউজিল্যান্ডের মতো পেস কন্ডিশনে খেলতে নামছে দল অথচ দলের তিন পেসারই অনভিজ্ঞ। তিন পেসারের মধ্যে দুই পেসার তাসকিন ও শুভাশীষের অভিষেক, আর রাব্বির অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ছিল মাত্র দুই ম্যাচ। আর এই অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপের সুবিধাটা শেষ ইনিংসে আদায় করে নিল নিউজিল্যান্ড। তাসকিন ও শুভাশীষকে বেধড় পিটিয়ে তুলে নিল দারুণ এক জয়। যেকোনো কন্ডিশনে টেস্টের পঞ্চম দিনে ব্যাটিং করা কঠিন। কিন্তু কাল ঘটল উল্টো ঘটনা। তাসকিন ও শুভাশীষ ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ছয়ের বেশি। মেহেদী হাসান মিরাজ ও কামরুল ইসলামও নাস্তানাবুদ। তবে অভিজ্ঞ বোলার থাকলে ম্যাচের ভাগ্য অন্য রকম হতে পারত তা সাকিবের বোলিং দেখেই অনুমেয়। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৩ করে। অন্য বোলাররা রানের গতিটা আটকে দিতে পারলেই ম্যাচটা ড্র করা সম্ভব ছিল। রুবেলের মতো অভিজ্ঞ পেসারকে একাদশে না রাখার কারণে এই হারের দায়টা টিম ম্যানেজমেন্টের ওপরও অনেকটা বর্তায়। হারের দায় ব্যাটসম্যানদের কাঁধেও নিতে হবে। কেননা যে দলটি প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করার সামর্থ্য রাখে সেই দলটি দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৬০ রানে অলআউট। এক সাব্বির রহমান ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান কিউই বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। অবশ্য ভাগ্যও সহায় ছিল না বাংলাদেশের। তা না হলে কেন এক ইনিংসেই দুজন ব্যাটসম্যান ইনজুরিতে পড়বেন। আগের দিন ইনজুরিতে পড়ার পর গতকাল ইমরুল তবু মাঠে নেমেছিলেন দলের কঠিন পরিস্থিতি দেখে, কিন্তু মুশফিক ১৩ রান করার পর রিটায়ার্ড হার্ড হয়ে আর মাঠেই নামতে পারেননি। তারপরেও ড্র করার জন্য স্কোরটা নিরাপদই ছিল। কেননা জয় পেতে হলে নিউজিল্যান্ডকে ওভারপ্রতি ৩.৮ গড়ে রান করতে হবে। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে এমন গড়ে রান করাটা অবিশ্বাস্যই বটে। কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের অনভিজ্ঞতায় দুসাধ্য সাধন করল নিউজিল্যান্ড।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর