মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এমন সর্বোচ্চ শাস্তি এই প্রথম

মাহমুদ আজহার

এমন সর্বোচ্চ শাস্তি এই প্রথম

ড. শাহদীন মালিক

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ‘এই প্রথম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এতসংখ্যক সদস্যের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এমন সর্বোচ্চ শাস্তি নিকট অতীতে হয়নি। তবে সত্তরের দশকে সামরিক ব্যর্থ অভ্যুত্থান-চেষ্টার জন্য অনেকের ফাঁসি হয়েছিল। ওই সময় সেনাবাহিনীর কয়েক শ সদস্যকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিরীহ মানুষ খুনের ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এত সদস্যের সর্বোচ্চ সাজা এই প্রথম।’ তিনি নৃশংস এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ড. শাহদীন মালিক এসব কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলায় র?্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ মোট ৩৫ জনকে সাজা দেয় আদালত। এর মধ্যে র?্যাবের সদস্যই ২৫ জন। প্রাণদণ্ডের আদেশ হয়েছে র?্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানাসহ ১৬ জনের। বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের নৃশংস সাত খুনের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও সরকারের একটি তদন্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট এই আইনজীবী। তিনি বলেন, একটি নৃশংস ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এতজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা অর্থের বিনিময়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এতে নিশ্চয়ই কোথাও ওই বাহিনীর শৃঙ্খলায় শিথিলতা ছিল। তাই সরকারের উচিত পৃথক তদন্ত করা। একই সঙ্গে নিহতদের পরিবারকে সরকারের অবশ্যই আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা সহযোগিতা করা আবশ্যক। তিনি বলেন, এ রায়ে তিনি উচ্ছ্বসিত নন। এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য কোনো বিশেষ বার্তা কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এত গুম-খুন হচ্ছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হচ্ছে, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে; তাই এমন একটি ঘটনায় উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ নেই। গত ১২ বছরে অন্তত ১ হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। গুমের ঘটনাও অনেক, সরকার যদিও তা অস্বীকার করছে। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারও তো গুম হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ভাগ্যবশত লাশ ভেসে উঠেছিল।’ বিশিষ্ট এই আইনজীবী বলেন, ‘এ রায়ের পেছনে তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউশনদের দায়িত্বশীলতা ছিল অনেক বড়। মামলাটির সঠিকভাবে তদন্ত হয়েছে। সরকারিক কৌঁসুলিও সঠিকভাবে মামলাটি উপস্থাপন করতে পেরেছেন। এক শর বেশি সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এখানে যেটা আশঙ্কা ছিল, প্রভাবশালী অভিযুক্তরা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবেন। সেখানে প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে তদন্ত কর্মকর্তা, সরকারি কৌঁসুলি ও সাক্ষীরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয় দিক।’ তিনি বলেন, ‘এ নৃশংস ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন। অন্যান্য খুনের সঙ্গে এটার পার্থক্য রয়েছে। খুনিরা সরকারি ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। যে কোনো সভ্য দেশে এভাবে অপরাধের শিকার হলে ভিকটিমদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এখানেও নিহত ড্রাইভারসহ কিছু দরিদ্র পরিবারও রয়েছে। নিহতদের তো আর জীবন ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিলে কিছুটা হলেও পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হবে। এটা সরকারের অবশ্যকর্তব্য।’ উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকবে কিনা— এমন প্রশ্নে শাহদীন মালিক বলেন, ‘এখন যে আপিল হবে তাও বিচার প্রক্রিয়ারই একটা অংশ। তবে বিচার প্রক্রিয়ার বড় ধাপ শেষ হয়েছে। আসামিদেরও শাস্তি হয়েছে। আপিলের জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। আপিলে রায় বহাল থাকবে কিনা, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। রায় দেখে বলা যাবে।’

সর্বশেষ খবর