বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংলাপ শেষ, যে কোনো সময় সার্চ কমিটি

রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

মাহমুদ আজহার

নির্বাচন কমিশন গঠনে যে কোনো দিন আসছে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি। এ নিয়ে ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শেষ হচ্ছে আজ। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাতে এসেছে শতাধিক প্রস্তাব। এগুলো পর্যালোচনা করে দু-এক দিনের মধ্যেই গঠন করা হবে সার্চ কমিটি। এর পরই গঠিত হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। অধিকাংশ দল আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। বিএনপি বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা জরুরি। তবে সময়-স্বল্পতায় নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন করার উদ্যোগ থেকে সরে আসছে সরকার। তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা হবে কি না সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। যদিও গতকাল খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় রাষ্ট্রপতি দলগুলোর নিজেদের মধ্যে সংলাপের কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে তার প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প  নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের পাশাপাশি দেশের সব রাজনৈতিক দলকেও এগিয়ে আসতে হবে এবং সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আলোচনা বা সংলাপ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য কমাতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোকেই সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বল এখন রাষ্ট্রপতির কোর্টে। তবে রাষ্ট্রপতির স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ প্রধানমন্ত্রী যেভাবে পরামর্শ দেবেন, সেভাবেই রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে আগের রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা বিতর্কমুক্ত ছিল না। এখন রাষ্ট্রপতি যদি সেই বিতর্ক এড়াতে চান, তাহলে বল রাজনৈতিক দলের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছে যে প্রস্তাব দেবে, সেই আলোকে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করতে পারেন। অন্যথায় বিতর্ক আরও বাড়বে।’

সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে বলে নতুন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন আবদুল হামিদ। আজ সর্বশেষ ডাকা হচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগকে। প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) সঙ্গে আজ সবশেষ সংলাপের সময় নির্ধারণ থাকলেও এক দিন আগেই দলটি লিখিতভাবে তাদের প্রস্তাবনা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে। সরকার-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাষ্ট্রপতি যেহেতু অধিবেশন আহ্বান করে ফেলেছেন সে ক্ষেত্রে অধ্যাদেশ আর হচ্ছে না। আবার আইন প্রণয়ন একটি লম্বা প্রক্রিয়া। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত আইনের খসড়া করবে। তা মন্ত্রিপরিষদ সভায় যাবে। এরপর মন্ত্রণালয় ভেটিং করবে। তারপর সংসদে যাবে। এর আগে সংসদে উত্থাপনের পর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যাবে। সার্চ কমিটি গঠন প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘অতীতে আইন ছাড়াও ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন নির্ভর করে সরকারের স্বদিচ্ছার ওপর। নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন থাকতেই হবে এমনটাও নয়। শামসুল হুদা কমিশন আইন ছাড়াই হয়েছে। তবে আইন থাকা ভালো। আমাদের এখন অপেক্ষা করতে হবে, রাষ্ট্রপতি কেমন সার্চ কমিটি গঠন করেন।’ আগামী ২২ জানুয়ারি অধিবেশন শুরু হলেও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে কাজী রকিব কমিশনের। ৯ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিচ্ছে কাজী রকিব নেতৃত্বাধীন ইসি। নতুন কমিশন আসবে এর পরই। এত স্বল্প সময়ে ফের সার্চ কমিটির বিকল্প নেই বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এক সপ্তাহের মধ্যেই সার্চ কমিটি গঠন করা হতে পারে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা নিয়ে রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সাড়া দিলে সময় আরও বেশি লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০১২ সালে ২৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। এ পর্যন্ত ১১ জন সিইসি ও ২৩ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও সার্চ কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর