বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জলমহাল দখল নিয়ে আওয়ামী লীগে সংঘর্ষ, নিহত ৩

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জলমহাল দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলি ও সংঘর্ষে এক গ্রুপের তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের জাররিয়া নদী দখলকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা একরার হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা মাসুক মিয়ার মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা একরার হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা মাসুক মিয়ার মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা একরার হোসেন দিরাই উপজেলা যুব লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি এবং মাসুক মিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ-মোশাররফ গ্রুপের নেতা। সংঘর্ষে নিহতদের সবাই একরার গ্রুপের সমর্থক। নিহতরা হলেন, দিরাই উপজেলার হাতিয়া গ্রামের ছানা উল্লাহর ছেলে তাজুল ইসলাম (৩০), আকিননগর গ্রামের ইছাক মিয়ার ছেলে শাহারুল (২৫) এবং একই গ্রামের মৃত আমান উল্লাহর ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (২৮)। সংঘর্ষে গুরুতর আহত হাতিয়া গ্রামের আল আমিন (২০) ও মুজাফর (২৭)-সহ পাঁচজনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দিরাই উপজেলার জাররিয়া নদী জলমহালের আধিপত্য বিস্তার ও দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় যুবলীগ নেতা একরার হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা মাসুক মিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিল। জলমহালে মাছ ধরার জন্য নদীর পাড়ে উভয়পক্ষ খলাবাড়ি নির্মাণ করে প্রস্তুতি নেয়। এর জের ধরে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত শাহারুল ও উজ্জ্বলকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। জলমহালের সাব-ইজারাদার যুবলীগ নেতা একরার হোসেন দাবি করেন, দিরাই উপজেলার দক্ষিণ নাগেরগাঁও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অনুকূলে ছয় বছর মেয়াদের জন্য জাররিয়া জলমহালটি সরকারের নিকট থেকে উন্নয়ন স্কিমে লিজ নেওয়া হয়। পরে সমিতির কাজ থেকে সাব-লিজ নেন তিনি। গত দুই বছর জলমহালে মাছ সংরক্ষণ ও আহরণ করেছেন বলেও দাবি করেন। তার দাবি, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়া নেপথ্যে থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাসুক মিয়াকে দিয়ে জলমহালটি দখলের উদ্দেশ্যে হামলা চালান। এতে তার পক্ষের তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। সংঘর্ষের সময় পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া ঘটনাস্থলে ছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি। দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা স্থানীয় ঝামেলা। এর সঙ্গে আমার এবং প্রদীপ রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ঘটনার সময় আমি উপজেলা সদরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে ছিলাম। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল জলিল জানান, সংঘর্ষস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, জলমহালের নেপথ্যে অনেকেই থাকেন। এই ঘটনায় কেউ যদি নেপথ্যে থাকেন তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সর্বশেষ খবর