বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোলোকলা পূর্ণ : বদিউল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোলোকলা পূর্ণ : বদিউল

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সাম্প্রতিক জেলা পরিষদ নির্বাচনটি নির্বাচনের নামে পাঁয়তারা হয়েছে। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে এতে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা আরও বেড়ে গেছে। তবে যেহেতু প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশে এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাই বিষয়টি ইতিবাচক। তবে জেলা পরিষদের নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর ইতিপূর্বে দেওয়া বক্তব্যের  সঙ্গেও আমরা দ্বিমত পোষণ করি না। গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সুজনের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় সংস্থাটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার জেলা পরিষদ নির্বাচনের চিত্র ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের তথ্য পর্যালোচনা সংক্রান্ত একটি বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এতে তিনি জেলা প্রশাসনকে জেলা পরিষদের অধীনে আনাসহ সরকারের প্রতি ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সুজনের সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন ও সহযোগী সমন্বয়কারী সানজিদা হক বিপাশাসহ অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।  সুজন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন মানেই হচ্ছে বিকল্পের মধ্যে বেছে নেওয়া। কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়ে গেল দেশের জনগণ জানলই না। আবার নির্বাচিত ব্যক্তিরাও জানেন না— তারা কি করবেন? তাদের কাজটা কী? তাদের দায়িত্ব কিংবা কর্মপরিধিই বা কী? তিনি আরো বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে শুধু আইনি ক্রটিই নয়, এতে ব্যাপক অনিয়মও হয়েছে। যার ফলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সামনে যে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে, আশা করব তা একটি শক্তিশালী কমিশন হবে। কেননা, হুদা কমিশন যে আস্থার সৃষ্টি করেছিল, তা ধ্বংস হয়েছে রকিব কমিশনের সময়। সংবাদ সম্মেলনে দিলীপ কুমার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, সুজন মনে করে জেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন আনা উচিত। স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য নির্বাচক মণ্ডলী একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, এ নির্বাচক মণ্ডলীকে সাধারণ ভোটাররা স্ব স্ব এলাকার বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে নির্বাচক মণ্ডলী হিসেবে কাজ করার জন্য নয়। দিলীপ কুমার আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০২ সালে প্রকাশিত তার ‘জেলায় জেলায় সরকার’ গ্রন্থে জেলা পরিষদ আইনের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তার মতে, এই আইন বাস্তবায়িত হলে একটি ‘অথর্ব  জেলা পরিষদ’ গঠিত হবে। তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র নির্বাচন পদ্ধতিই নয়, জেলা পরিষদ আইনে বর্ণিত আরও কিছু বিষয়ের সঙ্গে সুজন একমত নয়। তাই আইনের বিষয়টি মাথায় রেখে ছয় দফা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। তার মধ্যে রয়েছে— সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জেলা প্রশাসনসহ জেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারের সব বিভাগকে জেলা পরিষদের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একই ব্যবস্থা উপজেলা পর্যায়েও চালু করতে হবে। জেলা পরিষদের পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচক মণ্ডলীর পরিবর্তে সরাসরি জনগণের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের জন্য নির্বাচনী এলাকাকে বড় মনে হলে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫ জন সদস্য এবং ৫জন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত হবেন। সংরক্ষিত আসনের ক্ষেত্রে ঘূর্ণায়মান আসন সংরক্ষণ পদ্ধতির বিধান করা যেতে পারে। এ ছাড়া ওয়ার্ডের পরিধিও জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হতে পারে। একই সঙ্গে সংসদ সদস্যদের জেলা পরিষদে উপদেষ্টা রাখার বিধান বিলুপ্ত করতে হবে। চেয়ারম্যানসহ জেলা পরিষদের সদস্যদের আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান পরিবর্তন করতে হবে। অথবা সব ধরনের জনপ্রতিনিধির  ক্ষেত্রে একই বিধান প্রবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া জেলা পরিষদের বাধ্যতামূলক কার্যাবলীতে বর্ণিত (প্রথম তফসিল) উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভার ওপর জেলা পরিষদের তদারকিমূলক ভূমিকা প্রত্যাহার করতে হবে। কেননা, ধারণাগতভাবে স্থানীয় সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই স্বশাসিত। এ ছাড়া এই বিধান রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

 

সর্বশেষ খবর