সুইজারল্যান্ডের ডাভোস কংগ্রেস সেন্টারে ৪৭তম ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট সার্কের কার্যকারিতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এখনো যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ আছে। খবর : বাসসের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘হারনেসিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক একটি ইন্টারেকটিভ সেশনে মতবিনিময়ে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আট জাতির আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক খুব ভালোভাবে সক্রিয় আছে এবং আমি মনে করি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এর মাধ্যমে আরও অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।’
এ ইন্টারেকটিভ সেশনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রেনিল উইক্রিমিসিঙ্গি, ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী নির্মলা সীতারামান এবং সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধি ও সুশীলসমাজের সদস্যরা যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের প্রধান শত্রু হিসেবে দারিদ্র্যকে আবারও চিহ্নিত করে বলেন, ‘কীভাবে দারিদ্র্য নির্মূল করতে পারি সেদিকেই আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দারিদ্র্য বিমোচনে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করতে হবে এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে হবে।’ ‘আমরা দারিদ্র্য নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য বিবিআইএন, বিসিআইএম-ইসি ও বিমসটেক ফোরাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল করতে সাফটা শক্তিশালী হচ্ছে। বৃহত্তর পরিসরে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে চীনকে একীভূত করার জন্য বিসিআইএম-ইসি ফোরাম গঠন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ উন্নয়নের জন্য কক্ষপথে একটি সার্ক স্যাটেলাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বাংলাদেশে বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে— এ-সংক্রান্ত পাকিস্তানের সুশীলসমাজের এক প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক বলে সম্বোধন করছেন, তারা সবাই ১৯৭১ সালে অপরাধ সংঘটনের সময় নবীন ছিলেন এবং তারাই এ গণহত্যা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা সে সময় জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগে সম্পৃক্ত ছিলেন। এসব অপরাধেই তাদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচার ও দণ্ড প্রদান করা হয়।’ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এক দেশ থেকে বিনিয়োগ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়াটা কোনো অংশেই সহজ কাজ নয়। এ সময় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে তার সরকারের উদ্যোগে গৃহীত বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশের ওপর বিরূপ কোনো প্রভাব পড়বে কিনা— এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূষণকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্যই কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে উন্নততর এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘২০২১ সাল নাগাদ আমাদের সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য আমাদের ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রয়োজন।’আর এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লাকে ব্যবহার করতেই হবে।’ শখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তার সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরমাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছে।
পাশাপাশি তিনি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কয়লার ব্যবহার বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
