বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় দেবে না দুদক-এনবিআর

১৫ সরকারি সংস্থায় দুদকের দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় দেবে না দুদক-এনবিআর

ইকবাল মাহমুদ, নজিবুর রহমান

দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাউকে ছাড় দেবে না দুদক ও এনবিআর। অবৈধ টাকা বাতাসে উড়ে বেড়ায় মন্তব্য করে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ব্যক্তিগত ও পদ্ধতিগত কারণে এনবিআর-দুদক সম্পর্কে মানুষের ধারণা ইতিবাচক নয়। আমরা নিজেরা সতর্ক হই। সময় এসেছে কাউকে ছাড় না দেওয়ার। অবৈধ আয় যাতে কেউ করতে না পারে সে জন্য এনবিআরের সহযোগিতা চাই। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেছেন, আমরা সব ধরনের দুর্নীতি, হয়রানি, অসদাচরণ ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। ‘দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দৃষ্টান্তস্বরূপ কমিশনার থেকে যুগ্ম কমিশনার করা হয়েছে।

গতকাল সেগুন বাগিচার রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ‘জাতীয় শুদ্ধাচার ও নৈতিকতা’ শীর্ষক সেমিনারে দুদক ও এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সুলতান-উল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।  সেমিনারে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের জন্য এনবিআরকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এখন সময় এসেছে আমাদের সবার সতর্ক হওয়ার। বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির চিত্র এখন ভিন্ন। আমাদের দেশ নিয়ে চিন্তা করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে নিজেদের কল্যাণে আমাদের বেশি বেশি ট্যাক্স দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও পদ্ধতিগত কারণে এনবিআর-দুদক সম্পর্কে মানুষের ধারণা ইতিবাচক নয়। মানুষের এই বদ্ধমূল ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের সময় এসেছে সত্য কথা বলার। আমাদের ট্যাক্স জিডিপির হার বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব বাড়াতে বেশি বেশি ট্যাক্স দিতে হবে। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিজ নিজ কাজ সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পাদন করতে হবে। দুর্নীতি নির্মূলের পাশাপাশি অবৈধ আয় যাতে কেউ করতে না পারে সে জন্য এনবিআরের কর্মকর্তাদের উদ্যোগ, কর্মদক্ষতা ও সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘অবৈধ টাকা বাতাসে উড়ে বেড়ায়। নিজেরা সতর্ক হই। সময় এসেছে কাউকে ছাড় না দেওয়ার। অবৈধ আয় যাতে কেউ করতে না পারে সেজন্য এনবিআরের সহযোগিতা চাই।’ এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে আমরা ‘সুশাসন ও উন্নততর আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি’ চালু করেছি। এটাই এখন এনবিআরের সকল পর্যায়ে সঞ্চালিত হচ্ছে। সর্ব ক্ষেত্রে সুশাসনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আমরা সব ধরনের দুর্নীতি, হয়রানি, অসদাচরণ ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যারা করদাতাদের অযথা হয়রানি করেন, বার বার সতর্ক করার পরও সংশোধন হয়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইতিমধ্যে অনেক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দৃষ্টান্তস্বরূপ কমিশনার থেকে যুগ্ম কমিশনার করা হয়েছে। তাই দুর্নীতিকে সমূলে উপড়ে ফেলার জন্য আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।

দুর্নীতির সূত্র খুঁজতে ১৫ সরকারি সংস্থায় দুদকের দল : গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে আবারও ১৪টি প্রাতিষ্ঠানিক দল গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার আট পরিচালক দলগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান বিভাগের মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানে এসব দল কাজ করলেও সংস্থার মহাপরিচালক মুনির চৌধুরী এসব দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন। গঠিত তিন সদস্যের ওই সব দলে একজন করে উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক রয়েছেন। দুদক যে ১৫ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির সূত্র খোঁজ করতে নেমেছে সেগুলো হলো মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (ওসিএজি), বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট, আয়কর বিভাগ, গণপূর্ত অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি), ঢাকা ওয়াসা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, বাংলাদেশ রেলওয়ে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং ঢাকা মহানগরের সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিস।

এর আগে গত ১১ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানিয়েছিলেন, চলতি বছর দুর্নীতিপ্রবণ দফতরগুলোতে বিশেষ নজরদারি করবে তার সংস্থা। সেটা শিগগিরই দৃশ্যমান হবে। এরই ধারাবাহিকতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর