শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দলে দলে নির্বাচন প্রস্তুতি

ঘর গোছাতে কাজ শুরু আওয়ামী লীগের

রফিকুল ইসলাম রনি

দলে দলে নির্বাচন প্রস্তুতি

বিএনপিসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলছে আসনভিত্তিক জরিপের কাজ।

দলীয় এমপিদের চলমান উন্নয়নমূলক প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে তদারকি করার এবং নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে সফর শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। 

দলীয় সূত্র মতে, প্রতিটি নির্বাচনের আগে নিজস্ব দলীয় টিম নির্বাচনী এলাকাগুলোতে যে জরিপ চালায় তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটারদের অবস্থান, মানসিকতা, দলের প্রতি সমর্থনের হার এবং প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দলীয় উচ্চপর্যায়ে তুলে ধরা হবে। কেবল নিজ দলের প্রার্থীদেরই নয়, প্রতিপক্ষ দল এবং প্রার্থীদের খবরও নেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন নিয়ে বিজয় অর্জন করা। এজন্য  পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে দলটি। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে দল ঐক্যবদ্ধ না থাকলে ভরাডুবি হতে পারে। এজন্য কোন্দল মেটাতে তৎপর হয়েছেন দলের নীতি নির্ধারকরা। চট্টগ্রামে গুরু-শিষ্য হিসেবে পরিচিত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের মধ্যে বিরোধ মেটাতে ঝটিকা সফর করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি সেখানে দুই নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দল ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপও নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে জনসম্পৃক্ত সরকারি কর্মসূচিগুলোকে। রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্র দৃশ্যমান উন্নয়নও সরকারকে আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। এ ছাড়া সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে নানা ধরনের উদ্যোগ  নেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জেলা পর্যায়ে সরকারের অর্জনগুলো জনসভা, মতবিনিময় ও কর্মিসভার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। গত শনিবার দলীয় কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে এখন থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত দশম সংসদ নির্বাচনকালে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি যে সব প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি, সে সব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার জোর তাগিদ দেন তিনি। একই সঙ্গে জনসম্পৃক্ত সব উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করাই মূল লক্ষ্য দলীয় ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার। নির্বাচনী জরিপ চালানো এবং কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দল ও সহযোগী সংগঠনকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের লক্ষ্যেও দলীয় নেতা-কর্মীরা কাজ করবে। চলতি বছর রাজপথে থেকে জনকল্যাণমূলক কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের পাশে থাকার প্রত্যয় রয়েছে দলটির। যে কোনো মূল্যে এ বছর রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতেও বদ্ধপরিকর তারা। রাজনৈতিক ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন দিবসের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিও থাকবে বছরজুড়ে। এ ছাড়া সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরার জন্য বছরজুড়ে নানা অনুষ্ঠান চালানোর সিদ্ধান্তও রয়েছে দলটির। সরকার মনে করছে, চলতি বছর বিএনপি মাঠে নামার একটি পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে। তাই বছরজুড়ে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠ দখলে রাখবেন ক্ষমতাসীনরা। এতে একদিকে সংগঠন চাঙ্গা হবে, অন্যদিকে বিএনপিও মাঠে নামতে সাহস পাবে না। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রস্তুতিও অব্যাহত থাকবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সুশৃঙ্খল বন্ধন তৈরির কৌশলও অব্যাহত রাখছে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দলের প্রতি ভোটাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করাই হবে মুখ্য উদ্দেশ্য। জনগণের মন জয় করেই আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার তিন বছর পার করেছে ইতিমধ্যে। নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে আমাদের হাতে আছে দুই বছর। চলতি বছর সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকব। দলীয় সভানেত্রী ইতিমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর