শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
দলে দলে নির্বাচন প্রস্তুতি

খালেদা-তারেককে অযোগ্য করার শঙ্কা বিএনপির

মাহমুদ আজহার

খালেদা-তারেককে অযোগ্য করার শঙ্কা বিএনপির

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘অযোগ্য’ করা হতে পারে— এমন শঙ্কা বাড়ছে বিএনপিতে। নেতা-কর্মীদের ধারণা, বেগম জিয়ার দুই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। এ মামলার রায়ে নেতিবাচক ফল আসতে পারে। বিএনপিপ্রধানকে কারাগারে পাঠানো হতে পারে তাকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার উদ্দেশ্যে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এক মামলায় সাত বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। দেশে এসে জেলে গিয়ে জামিন না চাইলে তিনিও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আগামী নির্বাচনের জন্য তিনিও অযোগ্য হতে পারেন। একইভাবে দলের সিনিয়র পর্যায়ে অন্তত দুই ডজন ত্যাগী নেতাকে নির্বাচনে অযোগ্য করার শঙ্কাও রয়েছে।

জানা যায়, এ নিয়ে নেতা-কর্মীরা দুশ্চিন্তা করলেও খালেদা জিয়া জেলে যাওয়া নিয়ে ভাবছেন না। তার অনুপস্থিতিতে দল সুসংহত থাকবে কিনা, তা নিয়েই তার উদ্বেগ বেশি। দলকে শক্তিশালী করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনগুলোও ঢেলে সাজাচ্ছেন। অপেক্ষাকৃত ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তবে সন্দেহভাজন নেতাদের বিভিন্ন সময়ে কড়া বার্তাও দিয়েছেন বিএনপিপ্রধান। এ নিয়ে অতীতের উদাহরণও তাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ‘শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে ভরাডুবির পর দলের ভিতর-বাইরে শঙ্কার বার্তা বইছে। দলের একটি অংশ বলছেন, দেশের অধিকাংশ মানুষই তাদের পক্ষে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ ভিন্ন বার্তা দিয়েছে। এ নির্বাচন নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। এ অংশটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে। এজন্য প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনে নামতে প্রস্তুত তারা। আরেক অংশ বলছেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়াও ভুল মনে করেন তারা। এ অংশটি বলছেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারে না গেলেও অন্তত বিরোধী দলে থেকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শক্ত অবস্থানে থাকা যাবে। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বিএনপির প্রথম সারির অন্তত দুই ডজন নেতাকে নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হতে পারে। দলের ত্যাগী নেতাদের বাইরে রেখে অপেক্ষাকৃত অযোগ্য নেতাদের নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এদিকে সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে বিএনপি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এমন আশায় নির্বাচন কমিশন গঠনের পর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে নির্বাচন কমিশন কেমন হয়, তা দেখার অপেক্ষা করছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি ডাকলে এ নিয়ে আরেক দফা সংলাপেও বসতে চান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির দাবি মানা না হলে নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতেও চলতি বছরের মাঝামাঝিতে রাজপথে নামার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এর আগে বিভাগীয় জেলাগুলোয় জনসভাও করতে পারেন বিএনপিপ্রধান। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আমরা একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের জন্য একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনও প্রয়োজন। এ নিয়ে আমাদের চেয়ারপারসন ১৩ দফা প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির হাতে দিয়েছেন। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। অন্যথায় তা মেনে নেওয়া হবে না।’ দলীয় সূত্রমতে, আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা না দিলেও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। একই সঙ্গে নতুন নির্বাহী কমিটির অনেক সদস্যই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সবুজ সংকেত পেতে ঢাকা ও লন্ডনে তত্পরতা শুরু করেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘যে কোনো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন যত নির্বাচন হয়েছে, তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা মনে করি, আগামী নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট হবে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর