শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এককভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

এককভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। ৩০০ আসনের মধ্যে ১২০টি আসনের প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা তৈরি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ লক্ষ্যে সারা দেশে সাংগঠনিক সফর করছেন। গত ১ অক্টোবর হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারতের মধ্যদিয়ে এ প্রস্তুতি শরু হয়। তিনি বলছেন, আগামীতে এককভাবে নির্বাচন করে পার্টি ক্ষমতায় যেতে চায়। জোটগতভাবে নির্বাচন করে দলকে আর ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান না। এ জন্য দলের ভিতরে চলছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কৌশল হিসেবে সরকার ও বিরোধী উভয় শিবিরেই যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। কৌশলগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আগে দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পরিস্থিতি অনুযায়ী একক নির্বাচন করতে না পারলেও ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করা যাবে, তার হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখে চলছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি।  জানতে চাইলে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় পার্টি সবসময় নির্বাচনমুখী দল। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, জাপার কাউন্সিলের পর থেকেই সারা দেশে জনগণের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ১ জানুয়ারি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মহাসমাবেশের মধ্যদিয়ে আমাদের একক নির্বাচনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরও আড়াই বছর বাকি। কিন্তু এখনই আগাম নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছে জাতীয় পার্টি। পর্যায়ক্রমে সব বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ করছেন এইচ এম এরশাদ। মূলত দলের সাংগঠনিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে আগামী নির্বাচনকে কৌশল হিসেবে নিয়েছেন তিনি। এই সুযোগে যোগ্য প্রার্থীর খোঁজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন, একসময় তৃণমূলে জাপার ভালো অবস্থান থাকলেও এখন আর তা নেই। তাই এককভাবে নির্বাচন নিজেদের জন্য কতটা লাভবান হবে তা নিয়ে এখনো অনেক চিন্তার বাকি রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি আগামী নির্বাচন একক না জোটগতভাবে করা হবে এ সম্পর্কে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন এরশাদ। এ নির্দেশনা পেয়ে ইতিমধ্যে পার্টির প্রেসিডিয়ামের সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মীর আবদুস সবুর আসুদ, তাজ রহমান, সুনীল শুভরায়, এরশাদের উপদেষ্টা কাজী মামুনুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। কয়েকজন বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি, উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ বিষয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি স্বচ্ছ একটি নির্বাচন কমিশনের দাবি জানাচ্ছে। এ বিষয়ে এইচ এম এরশাদের উপদেষ্টা কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, প্রতিটি জেলায় পার্টির কার্যক্রম অনেক শক্তিশালী। পার্টির সব নেতা-কর্মী এখন নির্বাচনমুখী।

পার্টির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আগামীতে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বৃহদাকারে সংসদের প্রতিনিধিত্ব করবে জাপা। সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় স্যার (এরশাদ) ঘোষণা দিলেন নির্বাচনে অংশ নেবেন না। স্যারের ঘোষণা অনুযায়ী পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের নির্দেশনায় আমিসহ পার্টির ২২৪ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করল। দেখা গেল স্যারের স্ত্রী পার্টির বর্তমান সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পার্টির একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

 স্যার এবং পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার দুজনই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আবারও নির্বাচন আসছে। আবারও দলের প্রার্থী তালিকা তৈরি হচ্ছে। দলে কার কথা বিশ্বাস করব। আর কার সঙ্গে থাকব বুঝে উঠতে পারছি না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর