শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভোটের ময়দান গোছাতে ব্যস্ত ইসলামী দলগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের ময়দান গোছাতে ব্যস্ত ইসলামী দলগুলো

পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি না  পাওয়ায় ইসলামী দলগুলোর কার্যক্রম রাজপথে তেমন একটা দেখা না গেলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে তারা ভিতরে ভিতরে নানা তৎপরতায় ব্যস্ত সময় পার করছে। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে তারা নতুনভাবে শক্ত ভিত দাঁড় করানোরও চেষ্টা করছে।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১১টি ইসলামী দল রয়েছে। এর বাইরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তবে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করায় এ দলটি এখন ভিন্ন কৌশলে তৎপর রয়েছে। এছাড়া ২০ দলীয় জোটে আরও ৪টি নিবন্ধিত ইসলামী রাজনৈতিক দল রয়েছে। তারাও জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটেও রয়েছে ইসলামী দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। এ দলটি জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরও জানা গেছে, জোটের বাইরে থাকা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসলামী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী মাঠ তৈরিতে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ইসলামী দলগুলো খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। যেজন্য নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রতিটি ইসলামী দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী দলগুলো তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে। সময়মতো জোটের কাছে তাদের প্রার্থীর তালিকা তুলে ধরা হবে। কীভাবে আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলের নেতাদের অংশগ্রহণ বেশি সংখ্যায় নিশ্চিত করা যায়- তা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা বা বিভিন্ন পরিকল্পনাও করছেন।  ২০ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ) ও ইসলামিক পার্টি (একাংশ)। আর ১৪ দলীয় জোটে আছে তরিকত ফেডারেশন। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এসব দলের নেতারা জোটে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে নানা কৌশল নিচ্ছেন। এছাড়াও ইসলামী দলের মধ্যে রয়েছে মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), ইসলামিক ফ্রন্ট, জাকের পার্টি ইত্যাদি। এসব দল এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। তবে ‘সুযোগ-সুবিধা’ পেলে তারা যে কোনো জোটে যোগ দেওয়া বা নতুন কোনো জোট সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথাও ভাবছেন। একইভাবে নিবন্ধিত দলের বাইরে মো. ইসমাইল হোসাইনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টিও নেপথ্যে তৎপরতায় বেশ সক্রিয় বলে জানা গেছে। দলটি আগামী নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জামায়াতের প্রস্তুতি : জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক হিসেবে তাদের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয়ভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে স্বতন্ত্রভাবে সব আসন থেকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। জোটগতভাবে আসন ভাগাভাগি হওয়ার পরই মূলত তারা চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেবে। অবশ্য জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার জন্যও জামায়াত বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে চলেছে। এ বিষয়ে জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচনের জন্য জামায়াতকে আলাদা কোনো প্রস্তুতি নিতে হয় না। জামায়াত এটাকে একটা চলমান পদ্ধতি হিসেবেই গণ্য করে থাকে। দলীয় সরকারের অধীনে আমাদের দেশে কখনো কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। একই কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ দেশের কোনো বিরোধীদল অংশ নেয়নি। ভোটকেন্দ্রে মানুষের পরিবর্তে গরু, ছাগল ও কুকুরের বিচরণ পরিলক্ষিত হয়েছে এবং সারা দুনিয়ার কোথাও এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আশা করব, বাংলাদেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে আবারও একদলীয় নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ নেবে না। আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে আছি এবং এটা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

ইসলামী আন্দোলন : জোটের বাইরে অন্যতম বড় ইসলামী দল চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন এককভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সব আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার মানসিকতা রয়েছে আমাদের। নীতি-আদর্শের সঙ্গে মিল হলে আমরা যে কারও সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়টিও ভেবে দেখব।’

তরিকত ফেডারেশন : সরকার সমর্থক ১৪-দলীয় জোটে থাকা একমাত্র ইসলামী সংগঠন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমরা সারা দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করছি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাত আরও শক্তিশালী করতে ১৪-দলীয় জোটকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। আগামীতে জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচনে অংশ নেব। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য মাঠে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে আমাদের দায়ের করা মামলায় জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।’

খেলাফত মজলিস : এ সংগঠনের বায়তুলমাল সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, ‘আমরা একক নির্বাচনের লক্ষ্যে সংগঠনকে শক্তিশালী করছি। এ জন্য দলে একটি রাজনৈতিক সেল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনসহ রাজনৈতিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে এ সেল। পাশাপাশি জোটবদ্ধ হব কিনা- এ বিষয়েও আমাদের ইতিবাচক মনোভাব আছে। তবে এখনই বলা যাচ্ছে না, বর্তমান জোটে থাকব- নাকি নতুন কোনো জোটের সৃষ্টি করব।’

২০-দলীয় জোটভুক্ত : ২০-দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী দলগুলোও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। জোটের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুল জলিল বলেন, ‘৪০টি আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী আছে। নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও সংশ্লিষ্ট এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলের নির্বাচন-বিষয়ক একটি কমিটিও আছে।’ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ আরমান বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে দলে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা-প্রস্তুতি শুরু না হলেও সম্ভাব্য ২০ আসনে কাজ চালাচ্ছেন নেতারা। তবে জোটগতভাবে ৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

এ ছাড়া বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে আসা ইসলামী ঐক্যজোটও (একাংশ) নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচনে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আগ্রহী অনেককে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা জানিয়ে খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘৫০ থেকে ৬০টি আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী আছেন। তারা ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর