শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ বিষয়ে কী আছে সিআইএর গোপন নথিতে?

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশ বিষয়ে কী আছে সিআইএর গোপন নথিতে?

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী সিআইএর গোপন নথিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে রয়েছে অনেক অজানা তথ্য। সিআইএ যেসব অত্যন্ত গোপন নথি প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, শীর্ষ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদের শাসনামলসহ অন্যান্য প্রসঙ্গ রয়েছে। ‘টপ সিক্রেট’ মার্ক করা কয়েক হাজার পৃষ্ঠার অত্যন্ত গোপনীয় এসব নথির একটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বৈরিতা বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।

বাংলাদেশে ভারতের সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা : ২৬ নভেম্বর ১৯৭৫ সালের তারিখ দেওয়া ওই দলিলের একটি অংশে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা বিশেষ করে ভারতীয় হাইকমিশনারের আহত হওয়ার ঘটনা যা চরমপন্থিদের দ্বারা হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, যদিও সরকার দৃঢ়ভাবে তা নাকচ করে দিয়েছে, বিষয়টি দিল্লি এবং ঢাকার সম্পর্কের মধ্যে উত্তাপ বাড়িয়েছে। হাসিনা-খালেদা প্রসঙ্গ : কনফিডেনশিয়াল লেখা ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি নথিতে বলা হয়, ইউএস সিনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ কমিটির একজন কর্মকর্তা পিটার ডব্লিউ গ্যালব্রেইথ ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে ‘ব্যাক-টু-ব্যাক কল’ (ফোন) দিয়েছিলেন। দুই নেত্রীই দাবি করেন, সবকিছুর আগে তখনকার প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। দুজনই ৩ মার্চ তারিখে নির্ধারিত সংসদ নির্বাচনের বিরোধিতা করেন। দুজনেরই একে অন্যের প্রতি ব্যক্তিগত অপছন্দের বিষয়টি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়। তাদের ‘ঐকমত্য’ ছিল কেবল ‘একটি পয়েন্টে’। তা হলো, এরশাদের অপসারণ। এর বাইরে ঐক্যের কোনো অবস্থান নেই বলেও নথিতে বলা হয়। এরশাদের ক্ষমতার শক্তি যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন গোয়েন্দাদের এই গোপন নথিতেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুই নেত্রীই বিশ্বাস করতেন, মার্কিন সহায়তা পাচ্ছেন এরশাদ। জনপ্রিয় যে মতটি প্রচলিত ছিল সেটাই তারা দুজনও বলেছেন। আর তা হলো— যুক্তরাষ্ট্রই এরশাদকে ক্ষমতায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব কী? যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের কী গুরুত্ব সেটাও উঠে আসে এই নথিতে। ‘বাংলাদেশে কোনো ধরনের অস্থিরতা ভারতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে, বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীরা সেখানে আশ্রয় প্রত্যাশী হতে পারে’— এই বিষয়টি আমেরিকার বেশ মাথাব্যথার কারণ তা সিআইএর গোয়েন্দা রিপোর্টে পরিষ্কার। এ ছাড়া বাংলাদেশে অস্থিরতার ঘটনা ঘটলে এই উপমহাদেশে তৎকালীন সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ অনধিকার চর্চার সুযোগ পাবে— যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের নথিতে সেই আশঙ্কা প্রকাশ পায়। এরশাদকে হত্যার চেষ্টায় লিবিয়ার মদদ? ১৩ জানুয়ারি ১৯৮৬। এই তারিখ উল্লিখিত সিআইএ’র দলিলে লিবিয়ায় প্রশিক্ষণ পাওয়া একজন বাংলাদেশি নাগরিককে বাংলাদেশের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল বলেও উল্লেখ করা হয়। এর আগের একটি অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গেও সে জড়িত ছিল এবং ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পেছনে লিবিয়ার সহায়তা ছিল বলেও গোপন এ নথিতে তথ্য মিলেছে। রাষ্ট্রের মাধ্যমে লিবিয়া বিভিন্ন দেশে এভাবে সন্ত্রাস চালাত বলে সেখানে তথ্য রয়েছে। লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির নির্দেশে অর্থ এবং অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের গুলি করার জন্য। এসব ঘটনার মুখ্য ষড়যন্ত্রকারী কর্নেল সৈয়দ ফারুকুর রহমান (বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী হিসেবে ফাঁসিতে দণ্ডিত) এরই মধ্যে তা স্বীকারও করেছেন বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়। সিআইএর নথিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আরও দুটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা তিনি করেছিলেন। এরপর ১৯৭৭ সালে তিনি লিবিয়া চলে যান এবং একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি আবার ফিরে আসেন বাংলাদেশে। নথিতে বলা হয়, লিবিয়ার এই ভূমিকায় কী প্রতিক্রিয়া জানাবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা ছিল বাংলাদেশের সরকারের।

কারণ, দেশটিতে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজে নিয়োজিত থাকায় তাদের বহিষ্কারের ভয় ছিল। সেক্ষেত্রে আয়ের বড় একটি উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে লিবিয়ার অনেক কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশে। গ্রহণযোগ্যতার লক্ষ্যে এরশাদের আমেরিকা সফর : এসব গোপন দলিলে সামরিক শাসক এরশাদের ভারত সফর প্রসঙ্গ ছিল। ৭ অক্টোবর ১৯৮৩ সালের নথিতে বলা হয়, বাংলাদেশের চিফ মার্শাল ল’ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ ওয়াশিংটনে এসেছেন যেসব লক্ষ্য নিয়ে তার মধ্যে রয়েছে, বৃহৎ এই দাতা দেশটির (আমেরিকা) সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া। দক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এবং ভারতের সঙ্গে জটিল সম্পর্কের বিষয়ে সম্ভাব্য সহায়তাও ছিল এই সফরের লক্ষ্য। এর পাশাপাশি আমেরিকায় তার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি তুলে ধরে দেশের ভিতরে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করাও ছিল আরেকটি লক্ষ্য। এই নথিতে এরশাদের অতীত এবং বর্তমান সম্পর্কিত বিষয়াদিও উঠে আসে। এরশাদ তার সরকারকে সোভিয়েতবিরোধী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন বলেও যে আমেরিকা বিশ্বাস করে, তাও এই নথিতে উল্লেখ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর