শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

১০ দিন পর ফিরে এসেছেন গাইবান্ধার নিখোঁজ ২ নেতা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

নিখোঁজের ১০ দিন পর সাদুল্যাপুর উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দামোদরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ারুল হাসান জীম এবং দামোদরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদেক গতকাল ভোরে বাড়ি ফিরে এসেছেন। অপহরণকারীরা তাদের বুধবার রাত ১২টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুরে নামিয়ে দিলে তারা ভোরে বাড়িতে পৌঁছেন। তবে অন্য নিখোঁজ দুই নেতা নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুল ইসলাম প্রিন্স ও নলডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম শাপলার এখনো কোনো সন্ধান মেলেনি।

গতকাল দুপুরে মনোয়ারুল হাসান তার সাদুল্যাপুরের দক্ষিণ জামুডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিকদের জানান, ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাদুল্যাপুর-নলডাঙ্গা পাকা সড়কের লালবাজারের অদূরে ১০-১২  জন আমার ও সাদেকুল ইসলামের পথরোধ করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে দেড় ঘণ্টা পর অজ্ঞাত স্থানে একটি ছোট ঘরে রাখা হয়। মনোয়ারুল হাসান বলেন, তাকে আটকে রাখা হলেও কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তাদের তিন বেলা খাবারও দেওয়া হতো। এর মধ্যে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু কেন কী কারণে তাদের আটক করে রাখা হয়েছিল তারা বুঝতে পারেননি। এমনকি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া ১০-১২ জনের কাউকেও চিনতে পারেননি। তিনি জানান, বুধবার আনুমানিক রাত ১২টার দিকে তাদের দুজনকে একটি মহাসড়কের পাশে ফাঁকা জায়গায় মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে রেখে যায় কয়েকজন লোক। তারা বলেন, সামনে তোমাদের মোটরসাইকেলটি দাঁড় করানো আছে। ওটি নিয়ে সোজা সামনের দিকে চলে যাবে। পেছনের দিকে তাকাবে না। তারা মোটরসাইকেলে কিছু দূর আসার পর দেখেন একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে সৈয়দপুর লেখা। সেখান থেকে ভোর রাতে তারা বাড়ি পৌঁছেন। মনোয়ারুল হাসান জানান, তাদের কোনো জিনিসপত্র খোয়া যায়নি। তার মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, সোনার আংটি ও নগদ ৪০ হাজার ২১০ টাকাসহ সব জিনিসপত্র তারা ফেরত দিয়েছেন। তাদের কোথায় নিয়ে রাখা হয়েছিল তা তারা বুঝতে পারেননি। তাদের চোখ কাপড় বাঁধা অবস্থায় ছিল। তবে দুই দিন পর তাকে গোসল করার পর ভালো খাবার দেওয়া হয়। নামাজ পড়তে বলা হয়। এরপর বুধবার রাতে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় মোটরসাইকেলে তেল আছে কিনা। ছেড়ে দেওয়া হলে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা। চোখেমুখে অজানা সেই আতঙ্কের ছাপ নিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে শুকুর অক্ষত অবস্থায় ফেরত আসতে পেরেছি।

দোয়া করবেন আর কোনো পিতা-মাতার সন্তানকে যেন এভাবে নিরুদ্দেশ হতে না হয়। উদ্ধার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা সাদেকুল ইসলাম সাদেক বলেন, ‘১০ দিন ধরে একটি ছোট ঘরে আটক ছিলাম। কেন কী কারণে আটক করে রাখা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও কিছু জানায়নি অপহরণকারীরা’।

এদিকে, দুই নেতা উদ্ধার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার জন্য স্বজনসহ শত শত মানুষ বাড়িতে ভিড় জমান। তবে দুই নেতার সন্ধান মিললেও নিখোঁজ নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুল ইসলাম প্রিন্স ও নলডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম শাপলার খোঁজ মেলেনি। সাদুল্যাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরহাদ ইমরুল কায়েস জানান, চার নেতা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়। তাদের উদ্ধারে তৎপর ছিল পুলিশ। এর মধ্যে দুজনের ফিরে আসার খবর শুনেছেন। কিন্তু বাকি দুই নেতার সন্ধানে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর