শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্যাতক পুলিশের শাস্তি না হলে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি

নির্যাতক পুলিশের শাস্তি না হলে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হবে না

ড. শাহদীন মালিক

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, নির্যাতক পুলিশের শাস্তি না হলে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হবে না। এ জন্য নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক এবং তার আইনজীবীকে সাহস করে বিচারকের কাছে বলতে হবে যে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। রিমান্ডে  নিয়ে নির্যাতন করা হলে সেটা বিচারকের কাছে তুলে ধরতে হবে। নইলে পুলিশের হয়রানি ও প্রতিহিংসা বন্ধ করা কঠিন। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।   ড. শাহদীন মালিক বলেন, পুলিশ হেফাজতে নিয়ে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নীতিমালা বা গাইডলাইন রয়েছে। পুলিশ সেটা মানতে বাধ্য। কিন্তু বেশির ভাগ লোক রিমান্ডে নির্যাতনের কথা ভয়ে বলতে চান না। কারণ, বলার পর যদি নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। সাহস করে বিচারকের কাছে নির্যাতনের কথা বলতে হবে। ফলে নির্যাতনের কারণে দুই-চারজন পুলিশের শাস্তি হলে অন্যরা এটা করতে সাহস পাবে না। তিনি বলেন, পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভিকটিম ও আইনজীবীসহ সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় ভিকটিমরা ভয়ে পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তোলে না। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে, তাতে বলা আছে, কেউ যদি রিমান্ড থেকে এসে অভিযোগ করে যে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। ডাক্তার যদি রিপোর্ট দেয় যে নির্যাতন হয়েছে তাহলে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে পারবে বিচারিক আদালত। উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার (৫৪ ধারা) ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারা (১৬৭ ধারা) প্রয়োগ নিয়ে এক নীতিমালায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আটক ব?্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে মেডিকেল প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ নিতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।

রিমান্ডের বিষয়ে ড. শাহদীন মালিক বলেন, পুলিশ রিমান্ড চাইলে তার কেস ডায়েরি, অপরাধের সঙ্গে কী প্রমাণ আছে তা কোর্টে উল্লেখ করতে হবে। কোর্ট বিস্তারিত দেখে সিদ্ধান্ত  নেবে। এভাবে বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ না থাকলে তাকে ছেড়ে দিতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন ও একুশে টেলিভিশনের সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে প্যান্ট চুরিসহ তিন মামলায় ২১ দিনের রিমান্ড চেয়েছে আশুলিয়া থানার পুলিশ। এর আগে তাকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় বিচারিক আদালত পুলিশের সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এটিও দুঃখজনক। এটি আমরা আশা করি না। তিনি বলেন, হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না করলে, আইনজীবীরা অভিযোগ না করলে অনেক সময় বিষয়টি আদালতের নজরেই আসে না। আর নজরে না আসার কারণে আদালত এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে না। ফলে ভুক্তভোগীরাও প্রতিকার পায় না। তিনি আরও বলেন, সবাইকে ভয় পেয়ে চুপসে গেলে চলবে না। কাউকে না কাউকে সাহস করে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। অভিযোগ না করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। এ জন্যই ভিকটিম ও আইনজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আদালতের কাছে প্রতিকারের জন্য যেতে হবে। অন্যথায় সুরাহা হবে না। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ‘অপব্যবহার’ করে সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫৭ ধারা বাতিল করার বিষয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। কিন্তু এটা এগোচ্ছে না। এই ধারা বাতিল হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর