শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেন, বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, হয়েছে সংঘর্ষও

প্রতিদিন ডেস্ক

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প

বাইবেলের ওপর হাত রেখে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইবেল ধরে রেখেছেন স্ত্রী মেলানিয়া। পাশে ছেলে ব্যারন —এএফপি

সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশের ক্ষমতাবান ব্যক্তি হয়ে গেলেন ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ট্রাম্প। গতকাল মার্কিন স্থানীয় সময় ঠিক দুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) দেশটির প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস তাকে শপথ পাঠ করান। প্রায় আড়াইশ বছর আগে স্বাধীন আমেরিকার ট্রাম্প হলেন ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। 

শপথ নেওয়ার পর বিশ্ববাসীকে ধন্যবাদ দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উদ্বোধনী ভাষণ শুরু করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এ দিন আপনাদের, আপনাদের উদযাপনের দিন এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র, আপনাদের দেশ।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ যখন জনগণ নিয়ন্ত্রণ করবে তখন কোন দল ক্ষমতায় আছে সেটি সত্যিই কোনো বিষয় নয়।’ ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন, তিনি ওয়াশিংটন থেকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবেন জনগণের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টায় এক হয়েছে। ট্রাম্প তার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজার ও শিক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে শুধু আমেরিকা সর্বাগ্রে বিবেচনায় আমরা এগিয়ে যাব, আমেরিকা সবার আগে। প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমি আপনাদের জন্য লড়াই করব এবং আমি কখনো আপনাদের পড়ে যেতে দেব না। আমেরিকা আবারও জিততে শুরু করবে এবং এমনভাবে জিতবে যা অতীতে কখনো হয়নি।’ ট্রাম্প তার ভাষণে জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘চরমপন্থি ইসলামী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমরা সভ্য সমাজকে একজোট করব। আমরা তাদের পৃথিবী থেকে নির্মূল করব। আমি কথা দিচ্ছি, আমরা আর কখনই অবজ্ঞার শিকার হব না। একজোট হয়ে আমরা আবার আমেরিকাকে সমৃদ্ধিশালী করব। আমরা আমেরিকাকে আবারও গর্বিত করব। এবং হ্যাঁ, আমরা একসঙ্গে মিলে আমেরিকাকে অসাধারণ দেশে পরিণত করব।’ ‘ঈশ্বর আমেরিকাকে আশীর্বাদ করুন’ দুবার এ কামনা করে বক্তৃতা শেষ করেন ট্রাম্প। এ সময় সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়া বারাক ওবামাকে ‘দারুণ’ ‘দারুণ’ বলতে শোনা যায়। তার এই শপথ উপলক্ষে নয় লক্ষাধিক মানুষের ঢল নেমেছে ওয়াশিংটনে। তবে এত মানুষের সবাই কিন্তু ট্রাম্প সমর্থক নন। অনেকে এসেছিলেন তার শপথের প্রতিবাদ করতে। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবাদকারীদের রাস্তায় বসতে দেয়নি। রাসায়নিক দ্রব্য নিক্ষেপ করে তাদের একাধিকবার ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তার এই শপথ অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের পশ্চিম ভাগে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও গতকাল শপথ নিয়েছেন। ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে তার এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের পরিবারের সদস্য, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, জর্জ ডব্লিউ বুশ, ফার্স্টলেডি লরা বুশ, বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী এবং নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, রাজনীতিবিদ, দেশটির উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যোগ দেন। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া নিউইয়র্কের এ ধনকুবের স্থলাভিষিক্ত হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান বারাক ওবামার।

কীভাবে হলো ট্রাম্পের অভিষেক? এক প্রতিবেদনে তার বিস্তারিত তুলে ধরেছে বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, চার বছর পরপর জানুয়ারির ২০ তারিখ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নেন নতুন প্রেসিডেন্ট। ১৯৩৩ সালের আগে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক হতো সাধারণত ৪ মার্চ; কিন্তু ওই বছর ২০তম সংশোধনী কার্যকর হওয়ায় নির্বাচনের পর শপথের অপেক্ষা কমিয়ে আনা হয়। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গতকাল শপথ নিলেও ট্রাম্পের অভিষেক উদযাপনের আয়োজন শুরু হয়েছে আগের দিন থেকে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ওয়াশিংটন ডিসির লিংকন মেমোরিয়ালে শুরু হয় দিনব্যাপী কনসার্ট। ওয়াশিংটন ডিসি ফায়ার ডিপার্টমেন্টের এমারেল্ড সোসাইটি পাইপস অ্যান্ড ড্রামস, রিপাবলিকান হিন্দু কোয়ালিশন ও হাইস্কুল মার্চিং ব্যান্ড সকালের পর্বে অংশ নেয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় হবু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স আর্লিংটনে জাতীয় সমাধিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিকাল ৪টায় লিংকন মেমোরিয়াল কনসার্টের দ্বিতীয় ভাগে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। তার আগে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী টবি কিথ ও লি গ্রিনউড। ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার আগের রাতটি কেটেছে হোয়াইট হাউসের খুব কাছে  প্রেসিডেন্টের অতিথি ভবন ব্লেয়ার হাউসে।

এদিকে গতকাল সকালে ব্লেয়ার হাউস থেকে বের হয়ে সেন্ট জনস এপিসকোপাল চার্চে সকালের প্রার্থনায় অংশ নেন ট্রাম্প। এরপর তিনি সস্ত্রীক হোয়াইট হাউসে যান। সেখানে তাদের স্বাগত জানান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সঙ্গে ছিলেন ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা। একসঙ্গে কফি পান করেন তারা। পরে সেখান থেকে যান শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানস্থল ক্যাপিটল হিলে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাখো জনতার হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ট্রাম্প। বেলা সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টা) ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে শপথ করান বিচারপতি ক্লেরেন্স টমাস। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের বাইবেল হাতে নিয়ে পেন্স শপথ পড়েন বলে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। দুপুর ১২টায় প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস নতুন প্রেসিডেন্টকে শপথ পড়ান। এ সময় ট্রাম্পের হাতে ছিল আব্রাহাম লিংকনের স্মৃতিধন্য বাইবেল। শপথ নেওয়ার পর অভিষেক বক্তৃতা দিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ট্রাম্প যখন ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে এসে পৌঁছান তখন তাকে বেশ গুরুগম্ভীর দেখাচ্ছিল।

ওয়াশিংটনে ট্রাম্পবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ : ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার জন্য যখন সব কিছু চূড়ান্ত, তখন ওয়াশিংটনের রাস্তায় দেখা গেছে এক বিরাট ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল। বিক্ষোভকারীদের মুখ ঢাকা ছিল মুখোশ এবং স্কার্ফে। তারা ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় গাড়ি এবং দোকানের জানালা ভাঙচুর করে। অনেককে হুইসেল বাজাতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ পেপার স্প্রে ব্যবহার করে।

বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ : ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিনটিতে গতকাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। তবে রাশিয়া ছিল ব্যতিক্রম। সেখানে দ্বিতীয় দিনের জন্য আনন্দ উৎসব করেছেন তার একদল সমর্থক। তাদের আশা, ট্রাম্পের শাসনামলে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে। লন্ডনে টাওয়ার ব্রিজের ওপর ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারীরা একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়, যাতে লেখা ছিল— ‘বিল্ড ব্রিজেস, নট ওয়ালস’। অর্থাৎ ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেবেন বলে যে হুমকি দিয়েছিলেন তার প্রতি ইঙ্গিত করে এতে বলা হচ্ছে, দেয়াল তৈরি না করে সেতু নির্মাণ করুন। বিক্ষোভকারীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বের জন্য এক বিরাট হুমকি বলে বর্ণনা করেন। এ ছাড়া ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহর, ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যালিনাসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে। এএফপি, বিবিসি, সিএনএন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর