শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাস্তবমুখী পদক্ষেপ না নিলে ট্রাম্পে অস্থির হতে পারে বিশ্ব

মাহমুদ আজহার

বাস্তবমুখী পদক্ষেপ না নিলে ট্রাম্পে অস্থির হতে পারে বিশ্ব

শমসের মবিন চৌধুরী

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প বাস্তবমুখী পদক্ষেপ না নিলে বিশ্বে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্পের রক্ষণশীল অবস্থানে জঙ্গিবাদ উসকে দিতে পারে। ফিলিস্তিন ও অভিবাসন নীতির কারণে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈরী অবস্থার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ন্যাটো নিয়েও এরই মধ্যে তিনি নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের সাংঘর্ষিক অবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আবার রাশিয়ার সঙ্গে সখ্য গড়ার কথাও বলেছেন ট্রাম্প। এখন ক্ষমতা গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন শুরু না করা পর্যন্ত তার এসব কথার সবকিছুই অস্পষ্ট মনে হচ্ছে। অবশ্য তার বক্তব্যে ইতিবাচক কিছু দেখা  যাচ্ছে না। ট্রাম্প বাস্তবমুখী অবস্থান নিতে না পারলে বিশ্বে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। আমি মনে করি, বাস্তবতাকে সামনে রেখেই ট্রাম্প প্রশাসনকে এগোতে হবে।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি কী দাঁড়াবে এটা নিয়ে দেশের ভিতরে-বাইরে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ইসরায়েল ও অভিবাসন নীতি নিয়ে এরই মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে অবস্থান নিয়েছেন তা নিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। ইউরোপজুড়েও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিন্তা করার সময় আসেনি। তবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্প একটি রক্ষণাত্মক অবস্থান নিচ্ছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জিএসপি সুবিধা আর পাওয়া যাবে না। তার কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে, এ নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থানে।’ সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রাজনৈতিক দিক থেকে ট্রাম্প ইসরায়েলের ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থানে। এতে ফিলিস্তিনরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে মুসলিম বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থানে চলে যেতে পারে। সেখানে বাংলাদেশেও কিছুটা প্রভাব পড়বে। কারণ, ফিলিস্তিনের ব্যাপারে বাংলাদেশের একটি অবস্থান রয়েছে। ট্রাম্প এরই মধ্যে বলেছেন, ইসরায়েলের তেলআবিব থেকে দূতাবাস জেরুজালেমে নিয়ে আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ-অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী বাস করছেন। বাংলাদেশির সংখ্যাও কম নয়। এ নিয়ে অভিবাসীরা চিন্তিত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটা কেমন হবে—তা নির্ভর করবে তার কাজের মাধ্যমে।’ বিএনপির সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনে আত্তীকরণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে বাইরে সমালোচনা হচ্ছে। গণমাধ্যমেও কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। জামাতাকে তিনি উপদেষ্টার পদও দিয়েছেন। তবে ব্যাপারটা কাকে নিয়োগ দেবেন তা নয়, তিনি কী করবেন, সেটাই দেখার বিষয়। জন কেনেডি যখন ছোট ভাই রবার্ট কেনেডিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব দেন, তখন কেউ এটা নিয়ে সমালোচনা করেননি। কারণ, রবার্ট কেনেডির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা ছিল। তিনি দক্ষ ও যোগ্য ছিলেন। অবশ্য তার সঙ্গে ট্রাম্পের জামাতার তুলনা করা যায় না। কারণ, ট্রাম্পের জামাতা ইতিমধ্যে নানাভাবে সমালোচিত হয়েছেন। তার অতীতের ভূমিকায় ইতিবাচক কিছু নেই। তার কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের ভিতরে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় কি না সেটারও আশঙ্কা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন নিয়েও নানা অনিশ্চয়তা আছে। এ নিয়ে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ সাবেক এই কূটনীতিকের মতে, ‘ট্রাম্প একেক সময় একেক ধরনের কথা বলছেন। এখনো তেমন কিছুই খোলাসা করেননি তিনি। এর মধ্যে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তার বাস্তবায়নও তিনি করতে পারবেন না। এর একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, মেক্সিকো সীমান্তে যে প্রাচীর নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে মেক্সিকো বলেছে, তারা একটি পয়সাও দেবে না। কেন করবেন, কে ব্যয় করবেন—এটা তার অবাস্তব একটি প্রস্তাব। তিনি এখনো সেই অবস্থান থেকে সরেও আসেননি। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছেন, ন্যাটো নিয়ে নেতিবাচক কথা বলছেন। আবার রাশিয়ার সঙ্গে সখ্য গড়ার কথাও বলছেন। রাশিয়ার সঙ্গে তার সখ্য নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনে নানা মন্তব্য চলছে।’শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘ট্রাম্পকে নিয়ে আমরা এই মুহূর্তে ইতিবাচক তেমন কিছুই দেখছি না। আশাবাদী হওয়ারও কিছু নেই। তবে সময়ই বলতে পারবে কী হবে। এই মুহূর্তে ট্রাম্পকে নিয়ে বিশ্ব এক অনিশ্চয়তার যুগে বাস করছে। বাংলাদেশ নিয়ে কী অবস্থান নেন, তাও বলা যাবে না। তবে ফিলিস্তিন নিয়ে যদি তিনি বৈরী অবস্থান নেন, তাহলে বাংলাদেশ তো সমালোচনা করবেই। সেক্ষেত্রে সম্পর্ক ভালো হওয়ার সুযোগ কম। শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় বিষয় নিয়েও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে একটি বৈরী অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।’

সর্বশেষ খবর