রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তুতি

গোলাম রাব্বানী

সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তুতি

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরেই সব কিছু চূড়ান্ত করা হবে। এদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। তাদের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র ১৭ দিন। ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে বিদায় নেবেন তারা। আসবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগেও ২০১২ সালে ইসি নিয়োগের ১৪ দিন আগে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন সার্চ কমিটি গঠন হতে পারে। এক্ষেত্রে দু-এক দিনের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠনের সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরপরে নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম খোঁজার কাজ করবে সার্চ কমিটি। তারা নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম অনুসন্ধানের জন্য দুই সপ্তাহের কম সময় পাবেন।

বর্তমান ইসি নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও এবারে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কে জড়াতে চাইছে না সরকারও। ক্লিন ইমেজের লোকদের ইসিতে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিএনপিসহ অনেকটি দল তাদের পছন্দের ‘নির্বাচন কমিশনারদের’ নামের তালিকা দিয়েছে। এরমধ্যে বিএনপি ‘নির্বাচন কমিশনার’ হতে পারেন এমন ১০ জনের নাম প্রস্তাব করার পাশাপাশি সার্চ কমিটিতে কারা থাকবেন তাদের নামও রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছে।

জানা গেছে, সার্চ কমিটি গঠনের পরে যে সব দল ‘নতুন কমিশনের’ জন্য নাম প্রস্তাব করেননি তাদের কাছে আবারও নাম তালিকা চাওয়া হতে পারে। এ ছাড়া সাবেক সচিব, বিচারপতিদের নামের তালিকাও করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এরপর দলের প্রস্তাবিত নাম ও কমিটি অনুসন্ধান করে বিশেষ কিছু নাম রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করবে। পরে সেই তালিকা থেকে চূড়ান্ত হবে নতুন নির্বাচন কমিশনের নাম। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছেন রাষ্ট্রপতি। দীর্ঘ এক মাস ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি রাজনৈতিক দল আলাদাভাবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করেছে। রাষ্ট্রপতির কাছে সংলাপে কিছু রাজনৈতিক দল ইসি গঠন নিয়ে আইন প্রণয়নের দাবি জানালেও সময় ‘স্বল্পতা’য় তা বাস্তবায়নের আভাস নেই। তবে গতবারের মতো এবারও ‘সার্চ কমিটি’র প্রস্তাব করে কিছু দল। এ অবস্থায় সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রপতি সংলাপ শেষ করেছেন। আগের মতো পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করাটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আজ ২২ জানুয়ারি অধিবেশন শুরু হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনের। নতুন কমিশন আসবে এরপরেই। এত স্বল্প সময়ে ফের সার্চ কমিটির বিকল্প নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০১২ সালে ২৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও সার্চ কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে। কারা আসছেন নতুন নির্বাচন কমিশনে, তা নিয়ে সর্বত্র চলছে আলাপ-আলোচনা। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের বিদায়ের পর, দায়িত্ব নেবেন নতুন নির্বাচন কমিশন। তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে এ নির্বাচনে ই-ভোটিং চালু করার প্রস্তাব করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(১) এ বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।

২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নামের সুপারিশ তৈরি করতে চার সদস্যের সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করেন তত্কালীন রাষ্ট্রপতি। প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারককে সভাপতি করে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হন হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশন চেয়ারম্যান। এর আগে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অধিকাংশ দলই সার্চ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল। ইসি গঠন নিয়ে ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ২৩টি দলের মতামত নেন রাষ্ট্রপতি। এ সংলাপে অধিকাংশ দলই সংবিধান অনুসারে সিইসি ও ইসি নিয়োগে আলাদা আইন করা বা অনুসন্ধান কমিটির পক্ষে মত দেয়। সার্চ কমিটির আহ্বানে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল নতুন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের ব্যক্তির নামের তালিকা দিলেও বিএনপি কোনো নাম দেয়নি। ওই কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে যে সুপারিশ জমা দেয়, তাতে সিইসি ও চার কমিশনার নিয়ে পাঁচ পদের জন্য ১০টি নাম আসে। তার মধ্য থেকেই পাঁচজনকে বেছে নেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশের পর ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পর দিন প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিয়েই তারা যোগ দেন ইসিতে। সেই হিসেবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও তিন নির্বাচন কমিশনার এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি আরেক নির্বাচন কমিশনারের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর