রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

তবুও ধরাছোঁয়ার বাইরে সেই পুলিশ কর্মকর্তা

তাজউদ্দীনের নাতি এমপি রিমিপুত্রকে পেটানোর পর হাইকোর্ট তলব করেছিল তাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

তবুও ধরাছোঁয়ার বাইরে সেই পুলিশ কর্মকর্তা

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নাতি এবং এমপি সিমিন হোসেন রিমির পুত্র রাকিব হাসানকে গুলশানে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করার দায়ে আদালতে তলব করা পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার অন্যতম ছিলেন বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিম মিয়া। তখন তিনি ছিলেন গুলশান জোনের এসি। তার বিরুদ্ধে এরপর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে একের পর এক নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড তিনি অব্যাহত রেখেছেন। তার সর্বশেষ নিষ্ঠুরতার শিকার সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদা। সিমিন হোসেন রিমির পুত্রকে পিটিয়ে নিজেকে এখনো তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে মনে করেন।

২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গুলশান অ্যাভিনিউর রোডসাইড রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্কিং করার সময় রাকিব হাসানকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। ১৯ বছরের রাকিব তখন ‘এ-লেভেল’ পড়ছিল। পুলিশের নির্যাতনে তাকে নেওয়া হয় ইউনাইটেড হাসপাতালে। দেখতে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সদ্যপ্রয়াত জোহরা তাজউদ্দীনের নাতি। রাকিবের মামা সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে হাই কোর্টের নির্দেশে শুরু হওয়া তদন্ত বাধাগ্রস্ত না করার কথাও বলা হয়েছিল। সেই ঘটনার অন্যতম আশরাফুল আজিমকে হাই কোর্টে তলবের পর তখন বদলির নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় আহত অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে রাকিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে বন্ধু হিমেলকে নিয়ে গুলশানে একটি খাবারের দোকানের সামনে আমি গাড়ি পার্ক করছিলাম। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই পুলিশ সদস্য আমাকে ডাক দিয়ে বলেন, ‘এই, তুই এদিকে আয়।’ আমি ভদ্রভাবে বললাম, আমাকে তুই করে বলছেন কেন? এতে পুলিশ সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘তোর কাছ থেকে ভদ্র কথা শিখতে হবে?’ কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই পুলিশ সদস্য আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। তারা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে টহল পুলিশকে খবর দেন। কিছুক্ষণ পর টহল পুলিশের একটি দল এলে আমি একপর্যায়ে নিজেকে সোহেল তাজের ভাগ্নে পরিচয় দিই। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সোহেল তাজের ভাগ্নে! দাঁড়া, তোর মামাগিরি ছুুটাই।’ তখন রাকিবের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে মা সিমিন হোসেন জানান, টহল দলের পাঁচ-ছয়জন পুলিশ রাকিবকে মাটিতে শুইয়ে পেটাতে থাকেন। বুট দিয়ে তার বুকে লাথি মারে। শটগান দিয়ে তাকে আঘাত করে। কিছুক্ষণ মারধরের পর তাকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তুলে গুলশান থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। বিনা কারণে ছেলেকে আটক করার পর আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তার পরও তিন ঘণ্টা রাকিবকে আটক রাখে পুলিশ। আমাদের মতো লোকদের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে যাদের ওপর যোগাযোগ করার কেউ নেই, তাদের অবস্থা কী হবে!’ রাকিবের বাবা মোস্তাক হোসেন জানিয়েছিলেন, ‘ছেলেকে আটকের খবর পেয়ে আমি গুলশান থানায় যাই। গিয়ে দেখি রাকিব ও হিমেলকে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তখন ওসি থানায় ছিলেন না। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর একজন কর্মকর্তা আসেন। তিনি কোনো কথা না শুনেই আমাকে বকাঝকা শুরু করেন। এ সময় তার মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোন কল শেষে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সোহেল তাজের ভাগ্নে! জন্মের শিক্ষা দিচ্ছি। দুজনকেই থানায় ঢুকা। এরপর আমার ছেলে রাকিব ও তার বন্ধুকে টানাহেঁচড়া করে হাজতখানায় ঢুকায় পুলিশ। রাত সোয়া ৯টার সময় ওসি এসে মুচলেকা নিয়ে আমার ছেলেকে ছেড়ে দেন।’ এ সম্পর্কে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাই হোক, তিনি যদি কারও ওপর অন্যায়ভাবে বা বেআইনিভাবে কোন আচরণ করে থাকেন, তা অবশ্যই নিন্দনীয়। তার সেই আচরণ যদি অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে তাহলে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে এমন অনেক উদাহরণ আছে।’

সর্বশেষ খবর