রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে মুখ খুললেন মওদুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে মুখ খুললেন মওদুদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, দুই নেত্রীকে মাইনাস করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন ওয়ান-ইলেভেন সময়ের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ। একদিন আমাকে রাত ২টায় চোখ বেঁধে নিয়ে বলা হয়, এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ চাই। আমি বললাম, এটা অসম্ভব। তখন তারা বললেন, দুই নেত্রীকে দেশ থেকে বের করে দেব। মাইনাস করব। দেশে শূন্যতা সৃষ্টি হলেই তখন আমাদের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মইন উ আহমেদ হবেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু আমি তাদের এ প্রস্তাবে রাজি হইনি। কার্যত ওয়ান-ইলেভেন ছিল দেশকে ব্যর্থ করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। মইন শুধু রাজনীতিবিদদের সঙ্গেই নন, দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ওই সময়ের কর্মকাণ্ড একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত করতে কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এটা করা হবে এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা ‘জরুরি আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭-২০০৮)’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ওয়ান-ইলেভেনের স্মৃতিচারণ করে ব্যারিস্টার মওদুদ এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি মুস্তাহিদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ, ডিইউজে একাংশের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পরিকল্পনাই ছিল ভিন্ন। এজন্য তারা নির্বাচনের দিকে না গিয়ে মইনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য একটি রাজনৈতিক সংস্কার করতে চায়। একদিকে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযান অন্যদিকে তাদের ছিল দেশের নেতৃত্ব নেওয়ার খায়েশ। দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে গেছে সেনাসমর্থিত ওই ওয়ান-ইলেভেনের সরকার। জরুরি আইনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয়েছিল, সে সরকার ছিল অবৈধ এবং অসাংবিধানিক। তিনি বলেন, ড. ফখরুদ্দীনের নিয়োগটাই ছিল অবৈধ। সুতরাং পুরো উপদেষ্টা পরিষদও ছিল অবৈধ। কারণ তাকে নিয়োগ করতে হলে রাষ্ট্রপতি সেই সংবিধান অনুযায়ী সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি খুঁজে সেটা না পাওয়া গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একজন ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা করার কথা। তারা সেটা করেননি। সেজন্য ফখরুদ্দীনের নিয়োগটাই ছিল অসাংবিধানিক। আর ৯০ দিন যদি তারা বাড়িয়ে দিতেন তাও একটি কথা ছিল। কিন্তু সেটা তারা করেননি। তাদের ছিল অন্য এজেন্ডা।

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, দেশের সবচেয়ে বেশি সর্বনাশ করে গেছে সেই ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত সরকার। এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যে প্রতিষ্ঠান তারা ধ্বংস করেনি। সংবিধান অনুযায়ী তাদের এজেন্ডা ছিল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে তারা ফিরে যাবেন। ফখরুদ্দীনের বেআইনি নিয়োগের পরও আমরা ধরে নিই, তারা যদি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতেন তাহলে সব ঠিক হয়ে যেত। জরুরি আইন ঘোষণা করার দুই সপ্তাহের মাথায় সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোনো কারণই ছিল না জরুরি আইনের। বহিঃআক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য জরুরি আইন ঘোষণা করা হয়। আরেকটি অর্থনীতি যদি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু জরুরি আইন ঘোষণা করা হয় একটি উদ্দেশ্যে, তা হলো, তারা বলেছিলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। কিন্তু সেনানিবাসের অন্য পরিকল্পনা ছিল। আমাদের চোখ বেঁধে নিয়ে অনেক কিছুই করেছিল। অনেককে শারীরিকভাবেও নির্যাতন করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল দায়িত্ব হলো জনগণের আমানত রক্ষা করা। সেই ব্যাংক থেকে তালিকা দেওয়া হলো রাজনীতিবিদদের সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ কর। রাজস্ব বোর্ডের দায়িত্ব হলো কর আদায় করা। সেখানে তারা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা শুরু করল। সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হয় রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে। এর ফলে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তারা রাজনীতি বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল।

সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, একটা পর্যায়ে গিয়ে শিক্ষকদের অপমান করা হলো। সাতজন শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে যৌথবাহিনী তাদের ধরে নিয়ে জেলখানায় দেয়। এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভুলে গেছেন। আমরা রাজনীতিবিদরাও ভুলে যেতে পারিনি। যৌথ বাহিনী ওই সময় রাজনীতিবিদের শারীরিকভাবেও নির্যাতন করেছে। আজকে সরকারের এক মন্ত্রী রয়েছেন, যাকে যৌথ বাহিনী ফুটবলের মতো একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত লাথি দেয়। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ওই সময়কার সরকার প্রথমে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ করেছিল, পরে সেখান থেকে সরে গিয়ে তারা ‘ম্যানেজ টু ফর্মুলা’ শুরু করে। কিন্তু ম্যানেজ টু হলো না, হলো ম্যানেজ ওয়ান; যার খেসারত এখন সমগ্র জাতিকে দিতে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর