সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই দলে দুই সমস্যা

কাউন্সিলের তিন মাসেও প্রকাশ হয়নি গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র

রফিকুল ইসলাম রনি

দুই দলে দুই সমস্যা

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের তিন মাস পার হলেও এখনো প্রকাশ করা হয়নি দলটির ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র। এবারের কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটির আকার বাড়ানো হলেও ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ায় নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংগ্রহ করতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে এলেও তাদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নেতা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। গত বছরের ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের কাউন্সিলের পর প্রকাশিত গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে বেশ কিছু ধারা পরিবর্তন, সংযোজন ও বেশ কিছু ধারা নতুন করে  যুক্ত করা এবং সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের কাছ থেকে নতুন গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পাস করিয়ে নেওয়া হয়। আজ ২৩ জানুয়ারি সম্মেলনের তিন মাস পূর্ণ হলো। এখনো প্রকাশ করা হয়নি দলটির গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র। গত কয়েক দিন দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সারা দেশ থেকে জেলা ও উপজেলা নেতারা দলের গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্র সংগ্রহ করতে এলেও তারা নতুন কপি সংগ্রহ করতে পারছেন না। তারা পুরনো কপি সংগ্রহ করেই সন্তুষ্ট থাকছেন। সম্প্রতি কথা হয় কক্সবাজার থেকে আসা দলীয় নেতা মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংগ্রহ করতে এসেছিলাম। দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ের স্টাফরা জানিয়েছেন, এখনো নতুন কপি ছাপা হয়নি। তাই পুরনো কপি নিয়েই ফিরে যাচ্ছি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর আমরা জাতীয় কর্মসূচিসহ নানা ইস্যুতে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। প্রচার সম্পাদক দেশের বাইরে থেকে ফিরলেই প্রিন্টে দেওয়া হবে। আশা করছি খুব শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির আহ্বায়ক ও বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধনী কপির ফাইনাল প্রুফ দেখার কাজ চলছে। খুব শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে  কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আকার বাড়ানো হয়েছে। ৭৩ সদস্য কমিটি থেকে বাড়িয়ে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। সেখানে প্রেসিডিয়াম সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে বাড়িয়ে ১৭ করা হয়। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪ জন করা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ৭ থেকে বাড়িয়ে ৮ জন করা হয়। কেন্দ্রীয় সদস্য সংখ্যা ২৬ থেকে বাড়িয়ে ২৮ জন করা হয়। জাতীয় কমিটির আকার ১৭০ থেকে বাড়িয়ে ১৮০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিটির বাধ্যতামূলক বৈঠকের মেয়াদ ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করা হয়েছে। মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়। দলের গঠনতন্ত্রে ৩১(খ) ধারায় প্রত্যেক কাউন্সিলরকে প্রতি তিন বছরের জন্য ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হবে। এ ছাড়া দলের প্রাথমিক সদস্য ফোরামের চাঁদা ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। জেলা কমিটি ৭১ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ সদস্য, উপজেলা কমিটি ৬৯ থেকে ৭১ সদস্য, ইউনিয়ন কমিটি ৬৫ থেকে ৬৯ সদস্য ও ওয়ার্ড কমিটি ৫১ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ সদস্যের করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গীকারের অনুচ্ছেদেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও সব প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিলোপ সাধন’র জায়গায় সাম্প্রদায়িকতার পাশে ‘মৌলবাদ’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। আর ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ : সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন’ লাইনে সন্ত্রাসের আগে ‘জঙ্গিবাদ’ শব্দটি বসানো হয়েছে। গঠনতন্ত্রের ২ নম্বর ধারায় ‘বিশেষ করে অটিস্টিক শিশুদের আনুকূল্যে বিশেষ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা’ প্রসঙ্গ সংযুক্ত করা হয়েছে সংশোধনীতে। গঠনতন্ত্রের ৪৯ নম্বর ধারায় দলের তহবিল পরিচালনা অংশের শেষে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল এবং নির্বাচন কমিশনে আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাখিল করা হবে’- যুক্ত করা হয়েছে সংশোধনীতে। এ ছাড়া এবারই প্রথমবারের মতো গঠনতন্ত্রে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। একটি ধারা হচ্ছে— যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনি পরিবারের সদস্যরা কোনো দিনও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারবে না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে— পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দল মনোনীত প্রার্থী বাছাইয়ে ‘স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড’ গঠন। এ বোর্ডর সদস্য সংখ্যা করা হয়েছে ১৯ জন। অন্যদিকে নতুন ঘোষণাপত্রেও বেশ কিছু অধ্যায় এবং ধারায় সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কয়েকটি ধারাও যুক্ত হয়েছে। এবারের আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রের মূল চমক হচ্ছে— ‘নেতৃত্বের কারিশমা- আওয়ামী লীগের প্রধান সম্পদ জননেত্রী শেখ হাসিনা। এতে ‘সমসাময়িক রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের শক্তি ও সম্পদ দুটোই। তার দৃঢ় মনোবল, সাহসী নেতৃত্ব, তাত্ক্ষণিক, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তাকে দেশ ও বিদেশে তুমুল জনপ্রিয় করে তুলেছে। তিনি এখন তৃতীয় বিশ্বের অনন্য কণ্ঠস্বর। ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রীয় নানা অর্জনের পেছনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূমিকা, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পাওয়া সম্মাননার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর