সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
দুই দলে দুই সমস্যা

ব্যর্থতা ঢাকতে শাস্তির খড়গ তৃণমূল বিএনপিতে

মাহমুদ আজহার

ব্যর্থতা ঢাকতে শাস্তির খড়গ তৃণমূল বিএনপিতে

বিগত ৫ জানুয়ারি বিএনপির আন্দোলনে সফলতা যতটুকুই হয়েছিল, তার পুরো কৃতিত্ব তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই ছিলেন মাঠে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’সহ পরবর্তী সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচিই সফলতার মুখ দেখেনি। এমনকি ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বের পাশাপাশি কোটিপতি সেই ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও ছিলেন নিরুদ্দেশ। এখনো সেই প্রভাবশালী কাউন্সিলরদের খুঁজে পায় না নেতা-কর্মীরা। আন্দোলনে পুরোপুরি ব্যর্থ সেই ঢাকার দিকে বিএনপির তেমন নজর নেই। তবে জেলা উপজেলার কমিটি ঘষামাজার কাজ চলছেই। কাউকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, আবার যুক্ত করা হচ্ছে কাউকে। জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে অভিযোগ করেছেন, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে কম-বেশি সব জেলায় মাঠে সক্রিয় ছিল। গুম,  খুনসহ হামলা-মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীদের বড় অংশই তৃণমূলের। ওই সময় সবচেয়ে বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ঢাকা। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের সবাই আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য অনেকাংশে ঢাকাকে দায়ী করেছেন। ঢাকাকে শক্তভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সবার পরামর্শ থাকলেও এর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে আছে। মির্জা আব্বাস ও হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর বিএনপি আড়াই বছরেও ওয়ার্ড-থানার কমিটি দিতে পারেনি। মহানগরও চলছে আংশিক কমিটি দিয়ে। এর আগে একই অবস্থা ছিল সাদেক হোসেন খোকা ও আবদুস সালামের নেতৃত্বাধীন কমিটির। তাদের ব্যর্থতার কারণে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আব্বাস-সোহেলকে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বক্তব্য হচ্ছে, ঢাকা মহানগরে দুই কমিটিরই ব্যর্থতার পাল্লা ভারী। এখন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে নতুন করে ভাবতে হবে। দুই ভাগে ভাগ করে একসঙ্গে ওয়ার্ড, থানা ও মহানগরের কমিটি ঘোষণা করতে হবে। মাঠে থাকা নেতাদের গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের দাবি, দু-চারটি জেলায় দুর্বলতা থাকলেও তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু ঢাকা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকলে তার পুরো প্রভাব পড়ে বিএনপিতে। বিগত সময়ে আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য অনেকাংশে দায়ী ঢাকা ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ জন্য সবার আগে জরুরি হলো, ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি দেওয়া। তাদের মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উচিত, নিজে মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে ঢাকা মহানগরের কমিটি দেওয়া। দলীয় সূত্র জানায়, নেতৃত্বে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু সম্প্রতি ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর কমিটির একটি সম্ভাব্য তালিকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে দিয়েছেন। ওয়ার্ড পর্যায়ে ৫১, থানা পর্যায়ে ১৫১ এবং মহানগরে ২০১ জনের নামের তালিকা আছে এতে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার পক্ষ থেকে পৃথক একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও বিএনপি প্রধান বিভিন্ন মাধ্যমে ওয়ার্ড, থানা ও মহানগরের জন্য পৃথকভাবে নামের তালিকা নিচ্ছেন। এসব তালিকা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, মহানগরকে দুই ভাগেই ভাগ করার চিন্তাভাবনা করছেন বেগম জিয়া। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামতও নিয়েছেন তিনি। তবে মির্জা আব্বাস নিজে থেকেই মহানগরের নেতৃত্বে ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে ঢাকার কমিটি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। দুই ভাগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের নামও আলোচনা রয়েছে। ঢাকার উত্তরে এম এ কাইয়ুম ও তাবিথ আওয়ালের নেতৃত্বে কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে আবুল বাশার, ইউনুস মৃধার নাম ও সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রশীদের নামও আলোচনায় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে গতকাল রাতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু জানান, দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। এখন একে একে সব কমিটিই হয়ে যাবে। এরই মধ্যে মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল ও সর্বশেষ জাসাসের কমিটি দেওয়া হয়েছে। এখন ঢাকা মহানগর বিএনপিকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ম্যাডামের কাছে নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। আশা করি, শিগগিরই কমিটি দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকায় যেভাবে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে, তাতে আন্দোলন করা খুবই কঠিন। তারপরও কিছু সাংগঠনিক ব্যর্থতা তো ছিলই। এটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, গত দুই বছরে ২৩টি জেলা কমিটি ঘোষণা হয়েছে। বাকিগুলো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও অন্তত তিনটি জেলার কমিটি ঘোষণা হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই মাসের মধ্যে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার সবগুলোই নতুন কমিটি করা হবে।

সর্বশেষ খবর