সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা

মোস্তফা কাজল ও আফজাল, টঙ্গী থেকে ফিরে

শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা

আখেরি মোনাজাতে দেশ, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং মুসলমানদের ঐক্য কামনা করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আয়োজিত ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। গতকাল বেলা ১১টা ১১ মিনিটে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের দিল্লি মারকাজের প্রবীণ মুরব্বি মাওলানা মুহাম্মদ  সা’দ কান্ধলভী। শেষ হয় বেলা ১১টা ৪২ মিনিটে। এর আগে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে হেদায়েতী বয়ান করেন মাওলানা সা’দ। বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক। আগামী বছর (২০১৮) ১২ জানুয়ারি শুরু হবে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্ব শেষ হবে ১৪ জানুয়ারি। এর পর চার দিন বিরতি দিয়ে ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। শেষ হবে ২১ জানুয়ারি। মোনাজাতের আগে ইজতেমা ময়দান ছাড়াও দক্ষিণে খিলক্ষেত, উত্তরে বোর্ডবাজার, পূর্বে টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী ও পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন। ভোরের আলো ফোটার আগেই ইজতেমার মাঠের ১৬০০ একর এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলিগলিতে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছতে না পেরে অনেকে মহাসড়ক ও সড়কে অবস্থান নেন। মাওলানা সা’দ আখেরি মোনাজাতে বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের নেক আমল পূরণ কর। রোগব্যাধি থেকে মুক্তি দাও। আমরা যেন আমাদের নবী (সা.) ও আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে পারি। হে আল্লাহ, আমাদের গুনাহ মাফ করে দাও। দ্বীনের পথে চলার শক্তি দাও।’ মোনাজাত শুরুর পর কেঁদে বুক ভাসিয়ে দুনিয়া ও আখিরাত, দেশ ও বিশ্বের কল্যাণ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন মুসল্লিরা। আত্মশুদ্ধি, গুনাহ মাফ ও সব ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত চান। একই সময়ে দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজ নিজ ঘর, অফিস, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিভি ও রেডিওর সামনে বসে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মোনাজাতে শরিক হন। বাংলাদেশ ছাড়াও ৯৬ দেশের প্রায় ৭ হাজার বিদেশি মেহমান দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেন। স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সম্প্রচার ও মুঠোফোনের বদৌলতে বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ  মোনাজাতে শরিক হন। মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে। সূর্য উঠতে না উঠতেই কুড়িল-বিমানবন্দর-আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী-কালীগঞ্জ, আশুলিয়া-সাভার ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কসহ বিভিন্ন পথে হাজারও মানুষ হেঁটেই আসতে থাকেন ময়দানের দিকে। এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে হেঁটে আসেন। মিল-কারখানার ভিতর ও ছাদ, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, বিভিন্ন যানবাহন এবং নৌকায় বসেও মোনাজাতে শরিক হন বহু মানুষ। মোনাজাত শেষে হেঁটেই ফিরতে হয় প্রায় সবাইকে। যে অল্প কজন মানুষ বাস, পিকআপ বা কোনো যানবাহনে উঠতে পেরেছেন তাদের গুনতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। আখেরি মোনাজাতের জন্য গতকাল টঙ্গীর আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিরা আসা-যাওয়ার পথে গাড়ি না পেলেও তাদের কোনো অভিযোগ ছিল না। গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন জানান, গতকাল ভোরে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে ময়দানে এসেছি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার জন্য। আবার হেঁটেই বাড়ি যাব। আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যা হবে না। টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ১৩ জানুয়ারি ৫২তম ইজতেমার তিন দিনব্যাপী প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ জানুয়ারি প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের পর চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর শুরু হয়েছিল এই দ্বিতীয় পর্ব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর