মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পুলিশি সেবাকে আরও জনবান্ধব করুন

বিশেষ প্রতিনিধি

পুলিশি সেবাকে আরও জনবান্ধব করুন

পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল পুলিশ সদস্যদের ব্যাজ পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে একাত্ম হয়ে পুলিশি সেবাকে আরও জনবান্ধব করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যানধারণার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুলিশের সেবাকে আরও জনবান্ধব করতে হবে। প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের প্রতি অকুণ্ঠচিত্তে সেবার হাত প্রসারিত করতে হবে।

গতকাল সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘জঙ্গি মাদকের প্রতিকার, বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার’। অনুষ্ঠানে ১৩২ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য ২৬ জনকে ২০১৬ সালের বিপিএম ও ৪১ জনকে পিপিএম দেওয়া হয়। মরণোত্তর পুলিশ পদক বিপিএম পান গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও পুলিশ পরিদর্শক সালাউদ্দিন খান। উভয়ের স্ত্রী এ মরণোত্তর পদক গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে নিহত পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল ইসলামের পক্ষে তার স্ত্রী এবং পুলিশ কনস্টেবল আনসারুল হকের পক্ষে তার মা মরণোত্তর পদক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের জন্য ২৪ জন বিপিএম (সেবা) এবং ৪১ জন পিপিএম (সেবা) পেয়েছেন এবার। পদকপ্রাপ্ত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বিপুলসংখ্যক পদক অতীতে কখনো বিতরণ করা হয়নি। আপনারা এটা পেয়েছেন আপনাদের কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে এবং জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পেরেছেন বলে। এ উপলক্ষে পুলিশ সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং প্যারেড কমান্ডার চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারকে সঙ্গে করে একটি খোলা গাড়িতে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক এবং প্যারেড কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোখলেসুর রহমান তাকে স্বাগত জানান। পুলিশ সদস্যরা সাহসিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করে জনমনে আস্থা ও নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন এবং বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন বলে মন্তব?্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যা আমাদের উন্নয়নের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি আত্মমর্যাদাশীল এবং আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে যখন প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তখন দেশি-বিদেশি একটি চক্র এ অগ্রযাত্রাকে বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত। গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। যুবক-কিশোরদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। সহিংস আক্রমণের মাধ্যমে মানুষ হত্যার মতো বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করছে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পুলিশের সাফল্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সম্প্রতি আশুলিয়ার আশকোনা ও মিরপুরের কল্যাণপুরে পুলিশ জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান সফলভাবে পরিচালনা করেছে। পুলিশ জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড, অস্ত্রদাতা, প্রশিক্ষক ও আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। শেখ হাসিনা পুলিশবাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে বলেন, শুধু দেশেই নয়, প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। পরে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ দিবসের কেক কাটেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টার এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও একাত্তরের বীর শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য রাজারবাগ-৭১-এর নামফলক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য এবং সেনা ও বিমানবাহিনী প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর