বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

কোটি টাকার চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় আন্দোলনে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী

কোটি টাকার চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় আন্দোলনে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী

সাঈদ খোকন

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বিভক্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তার বাবা মরহুম মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তার নানা ছিলেন পুরান ঢাকার অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মাজেদ সর্দার। সাঈদ খোকন মেয়র হয়েছেন ২১ মাস হলো। এই সময়ে তিনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার সবচেয়ে আলোচিত কাজ গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকার হকারমুক্ত ফুটপাথ। এ ছাড়া নগরী পরিচ্ছন্ন রাখতে তিনি দক্ষিণ সিটি জুড়ে ময়লা ফেলার ‘বিন’ স্থাপন করেছেন, যা তিনিই প্রথম স্থাপন করেন। মেয়র সাঈদ খোকনের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিদিন। জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নিজামুল হক বিপুল নগর ভবনে মেয়রের দফতরে এই সাক্ষাৎকার নেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন : মেয়র নির্বাচিত হলেন প্রায় দুই বছর। এই সময়ে উল্লেখ করার মতো কী কী কাজ করলেন।

সাঈদ খোকন : আমরা উল্লেখযোগ্য অনেক কাজ করেছি। সিটি করপোরেশনের আওতায় প্রায় ৩০০ রাস্তার সংস্কারকাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ করেছি। সড়কবাতির প্রায় ৫৫ ভাগ এলইডিতে রূপান্তর করা হয়েছে। জুন নাগাদ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্ট্রিট লাইট শতভাগ এলইডি হয়ে যাবে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টিম ট্র্যাকিং সিস্টেম বলবৎ করা হয়েছে। সব পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে। এতে কে কোন জায়গায় আছেন তার অবস্থান দেখতে পাই। শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে ৫ হাজার ৭০০ বিন স্থাপন করেছি। সাধারণ মানুষ তাদের হাতে ব্যবহৃত টিস্যু, চিপসের খালি প্যাকেট, হাতে থাকা ময়লা রাস্তায় না ফেলে যাতে বিন-এ (ধাতব ঝুড়ি) ফেলেন সেজন্য ৫ হাজার ৭০০ বিন স্থাপন করেছি। ময়লার কনটেইনারগুলোকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে যাতে চোখে না পড়ে, দুর্গন্ধ না ছড়ায়। নর্দমাগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। আমরা জলাবদ্ধতা ৫০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এ বছরও এ কাজ চলমান রয়েছে। এ বছর নাগাদ শান্তিনগরের জলাবদ্ধতা আশা করি ১০০ ভাগ দূর করতে সক্ষম হব। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্যান্য এলাকার জলাবদ্ধতাও ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কমে যাবে। এজন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার খালগুলো আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছি। গত বছর করেছি, এ বছরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আমরা প্রতিনিয়ত শিশু হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ ও সিটি করপোরেশন স্কুলগুলোর মধ্য দিয়ে শিক্ষা প্রসারে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আমরা খাদ্যের ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে থাকি। এটা আমাদের চলমান রুটিন ওয়ার্ক। এ ছাড়া বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ বিশেষ সময়ে আমরা শক্তভাবে মনিটরিং করে থাকি। বিশেষ করে রমজান ও বিভিন্ন উৎসবে এটা করি। এতে বাজার স্থিতিশীল থাকে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি যে বিন বসিয়েছেন অনেক জায়গায় নাকি সেগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছে।

সাঈদ খোকন : জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় সচেতনতামূলক টিভিসি প্রচার করেছি। এগুলো চলমান কার্যক্রম। একইভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু আমাদের যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য সে লক্ষ্যে পৌঁছতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। আর এ লক্ষ্যে পৌঁছতে নগরবাসী সবার সহযোগিতা লাগবে। এটা জরুরি। আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রাতভর কাজ করেন। কিন্তু দেখা যায় শহরে সারা দিন বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য জনগণের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের যে সীমাবদ্ধতা তাও আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

আর বিন সম্পর্কে আপনি যা বললেন তার সঙ্গে আমিও একমত। আমরা ৫ হাজার ৭০০ বিন বসিয়েছিলাম। নগরীতে এটি আমরা প্রথমবারের মতো চালু করেছিলাম। এর মধ্যে ২২০টি বিন চুরি হয়ে গেছে। গাড়ি ও মোটরসাইকেলের ধাক্কাসহ বিভিন্ন কারণে ১৯৭টি বিন নষ্ট হয়ে গেছে। বলতে গেলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ ব্যবহার-অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এগুলোকে আমরা রিপ্লেস করে দেব। আমরা নগরবাসীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি এই বিন ব্যবহারের জন্য। জনগণের দায়িত্ব এর সঠিক ব্যবহার করা, সম্পদটা রক্ষা করা।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে ফুটপাথ দখলমুক্তকরণ। আপনি ইতিমধ্যে সেই কাজ করেছেন। গুলিস্তান ও মতিঝিলের ফুটপাথ থেকে হকারদের উচ্ছেদ করেছেন।

সাঈদ খোকন : নগরীর ব্যস্ততম গুলিস্তান ও মতিঝিল হকারমুক্ত থাকবে— আগে এটা কেউ কল্পনাও করেনি। আমরা এ কাজটি করেছি এবং সফলতার সঙ্গেই করেছি। জনমনে সংশয় রয়েছে, এ অবস্থা কতদিন থাকবে। একে স্থায়ী করতে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। আমরা একটা উপায় খুঁজে বের করব যার মধ্য দিয়ে কর্মদিবসে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকা হকার ও অন্যান্য অবৈধ দখলমুক্ত রাখব। আমরা এটা বলতে পারি, আমরা জনগণের রাজপথ, জনগণের ফুটপাথ ফিরিয়ে দিয়েছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : হকার উচ্ছেদের এই ধাক্কা সামাল দিতে আপনাকে বেগ পেতে হচ্ছে। আপনার দল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছেন। এটা কত দিন আপনারা ধরে রাখতে পারবেন?

সাঈদ খোকন : এখানে আমার মূল বিষয় হচ্ছে জনগণের রাজপথ ও ফুটপাথ জনগণকে ফিরিয়ে দিয়েছি। এখানে কে কোন দল করল, কে কোন অঙ্গসংগঠন করল, তা আমি বিবেচনায় আনিনি। আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ফুটপাথ হকারমুক্ত করে জনগণের হাঁটাচলার জন্য ফিরিয়ে দেওয়া। তা করতে পেরেছি।

আমার দৃঢ়বিশ্বাস এটা আমরা স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে পারব। হকার ও অবৈধ দখলে থাকা এলাকা মুক্ত করে সেসব স্থানে আমরা সুন্দরায়ন শুরু করেছি। ফুটপাথে টাইলস বসানোর কাজ চলছে। ফেনসিংগুলো বসিয়ে দিচ্ছি। রাস্তায় মার্কিং করে দিচ্ছি। মিডিয়ানগুলোয় ফুলের গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করে দিচ্ছি। নবরূপে সাজিয়ে দিচ্ছি। এক কথায় উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে।

একইভাবে নগরীর সব রাস্তার মিডিয়ানগুলো আমরা ফুলের গাছ দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার কাজ করছি। হয়তো দেখেছেন মতিঝিলে পূর্বাণী হোটেলের সামনের রাস্তা আমরা একটা মডেলে সাজিয়েছি। সে আদলেই গোটা নগরীকে সাজানোর চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : হকাররা আন্দোলন শুরু করেছেন। এ আন্দোলন কীভাবে মোকাবিলা করবেন? আর হকারমুক্ত ফুটপাথ গড়তে পুলিশের সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?

সাঈদ খোকন : দেখুন, হকার সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমরা এ কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নিই। সেখানে হকার্স ফেডারেশনসহ অন্যান্য হকার সংগঠন ছিল। সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমরা খুব সুন্দরভাবে ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে পেরেছি।

আপনারা জানেন, মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকায় এই হকারদের বসিয়ে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। যারা আজ আন্দোলন করছেন তারা এর সুবিধাভোগী। এ চাঁদা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বিভিন্নভাবে হকার নাম দিয়ে লোকজন জড়ো করে এ প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্র ও বাধা উপেক্ষা করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তার এ অভিযান অব্যাহত রাখবে এবং গুলিস্তান ও মতিঝিল হকারমুক্ত রাখবে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি হকারমুক্ত করছেন, একে নগরবাসী সাধুবাদ জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে নগরীতে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে অবৈধ পার্কিং। নির্দিষ্ট স্থান থাকার পরও যত্রতত্র এলোপাতাড়ি গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো আর এলোমেলো গাড়ি চালানোর কারণে নগরীতে রোজই যানজট লেগে থাকে।

সাঈদ খোকন : হকার উচ্ছেদ অভিযান শেষ করার পর আমরা অন্যান্য সমস্যার প্রতিকারে হাত দেব। বিশেষ করে অবৈধ পার্কিংবিরোধী অভিযানে যাব। ইতিমধ্যে নগর ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। পার্কিংয়ের জন্য বেশকিছু স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। কোথায় কোথায় পার্কিং থাকবে না তাও নির্ধারণ করে দেব। বাসস্ট্যান্ড ও যাত্রী ছাউনিগুলোর সংস্কার করে দেব। সেসব স্থানে ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : হকার পুনর্বাসনে আপনারা কী করছেন।

সাঈদ খোকন : আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গুলিস্তান, মতিঝিলসহ পার্শ্ববর্তী সাপ্তাহিক ‘হলি ডে মার্কেটের’ বেশ কয়েকটি জায়গা হকারদের বসার জন্য চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে, সেগুনবাগিচা কার্পেট গলি, নবাবপুর রোড এসব জায়গায় তারা শুক্রবার বসবেন। শনিবার যেসব এলাকায় স্কুল, অফিস, দোকানপাট বন্ধ সেসব এলাকায় আমরা তাদের হলি ডে মার্কেটের ব্যবস্থা করে দেব। শুধু তাই নয়, এ হলিডে মার্কেট জমিয়ে তোলার জন্য যা যা দরকার প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, হকারদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা, তাদের ইউনিফর্ম দেওয়া, তাঁবু দেওয়াসহ যা যা প্রয়োজন সবই করা হবে। এ ছাড়া আমরা বলেছি, অফিস সময়ের পর সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা অবধি তারা বসতে পারবেন। এর বাইরে তালিকাভুক্ত যেসব হকার মনে করেন তাদের পেশা পরিবর্তন করবেন, বিদেশে শ্রমিক হিসেবে যেতে চান— তাদের আমরা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে সেই ব্যবস্থা করব। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা, দফতর, অধিদফতর, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রকমের প্রকল্প থাকে সেখানে যদি তারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে চান তাহলে সিটি করপোরেশন তাদের চাকরি দেওয়ার জন্য জোরালো সুপারিশ করবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অনেক। এগুলো অপসারণের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন? আর ঐতিহাসিক ও পুরনো স্থাপনা রক্ষায় আপনার কোনো উদ্যোগ আছে?

সাঈদ খোকন : আসলে ঐতিহ্যের বিষয়টি দেখছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। আমরা পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের করি কাজ। ইতিমধ্যে আমরা ১০৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছি। এগুলো ভেঙে ফেলার জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে। এ নোটিস পাওয়ার পর অনেক ভবন মালিক এসেছেন এবং আবেদন করেছেন। তারা বলছেন, তাদের ভবনগুলো তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয় যে তাত্ক্ষণিকভাবে ভেঙে ফেলতে হবে। এ কারণে আমরা আমাদের প্রকৌশলীদের আবার রি-অ্যাসেসমেন্ট করার নির্দেশ দিয়েছি। তাদের প্রতিবেদনে যেগুলো একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হবে সেগুলো ভেঙে ফেলব। অন্যগুলোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি কিছু দিন আগে বলেছিলেন, আপনার সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক পার্ক ও মাঠ রয়েছে, যেগুলো উদ্ধার করে মানুষের ব্যবহার-উপযোগী পারিবেশ তৈরি করবেন।

সাঈদ খোকন : ইতিমধ্যে ১২টি খেলার মাঠ ও ১৯টি পার্ক দখলমুক্ত করে সিটি করপোরেশনের আওতায় আনা হয়েছে। এগুলোর সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিয়ে তাদের নকশা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দরপত্র আহ্বানের কাজ শেষ করে ২০১৭ সাল নাগাদ এই ১২টি খেলার মাঠ ও ১৯টি পার্ক নতুনভাবে সাজিয়ে দেব। আমাদের এ প্রকল্পের নাম ‘জল-সবুজে ঢাকা’। আমরা সবুজ দিয়ে ঘিরে দেব। সেখানে জলের ব্যবস্থা থাকবে। এ প্রকল্পের সঙ্গে নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে ৭০ জন স্থপতি জড়িত। ১৩টি সংস্থা এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নগরী দখলমুক্ত করতে বিশেষ করে নগরীর খাল উদ্ধার ও ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানে কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন বা নিচ্ছেন? আগামী বর্ষায় কি মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে?

সাঈদ খোকন : শান্তিনগরে আগামী বর্ষায় ওয়াটার লগিং হওয়ার কথা নয়। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ মুহূর্তে শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। বৃষ্টি হওয়ার পর বলতে পারব। আমরা যেভাবে কাজ করেছি তাতে শান্তিনগর এলাকায় জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়। এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্যান্য এলাকায় জলাবদ্ধতা ৭০ থেকে ৮০ ভাগে নেমে আসবে। আমরা যে ড্রেনের কাজগুলো করেছি, সেগুলোকে বড় করে দিয়েছি, পরিষ্কার করে দিয়েছি, আবার পরিষ্কার করছি তাতে জলাবদ্ধতা কমে আসবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নগরীতে মশার উপদ্রব অসহনীয় হয়ে উঠেছে। মশা দমনে আপনারা কী করছেন।

সাঈদ খোকন : আমি বলব, তুলনামূলকভাবে দক্ষিণ সিটিতে ঝোপঝাড়, খাল-বিল, নালা খুব কম। পুরান ঢাকায় তো একেবারেই নেই। গাছপালা বলতে নেই-ই। ঝোপঝাড়ের তো কোনো সুযোগই নেই। এক কথায় মশার ব্রিডিং সেন্টার নেই। সে কারণে পুরান ঢাকায় মশার উপদ্রব কিন্তু খুব একটা দেখতে পাবেন না। তবে হ্যাঁ, ধানমন্ডি, রামপুরার পাশে বনশ্রীর কিছু এলাকা, মানিকনগরসহ আশপাশের এলাকায় জলাশয়, ঝোপঝাড় রয়েছে। সেসব এলাকায় মশার উপদ্রব রয়েছে। এসব এলাকার মশা দমনে আমাদের কার্যক্রম চলছে। এতে কতটা সফলতা আসছে তা অবশ্য প্রশ্নসাপেক্ষ। আমাদের চেষ্টা রয়েছে নিয়ন্ত্রণে আনার। তবে এটা খুবই ডিফিকাল্ট।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দক্ষিণ সিটিতে রাস্তাঘাটে বছর জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি চলে। কখনো বিদ্যুৎ, কখনো ওয়াসা, কখনো টেলিফোন লাইন টানার নামে রাস্তা কাটা হয়। এতে ধুলার নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা। রাস্তাঘাটও ব্যবহার-অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেওয়ার কোনো উপায় কি আপনারা ভাবছেন?

সাঈদ খোকন : এ ভোগান্তির স্থায়ী সমাধানের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ‘কমন ইউটিলিটি ডাক টানেল’ করার জন্য একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে। অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোও হয়েছে। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ প্রকল্প। এটা যদি করা যায় তাহলে এ সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান আমরা আশা করি। মাটি থেকে প্রায় ৪০ ফুট নিচ দিয়ে এ টানেলটি নিয়ে যাওয়া হবে। এ টানেলে সব ইউটিলিটি থাকবে। তখন আর রাস্তা কেটে মেরামতের প্রয়োজন হবে না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নগরবাসীর স্বাস্থ্যসচেতনতার জন্য ‘মেডিটেশন’ করার কোনো পরিকল্পনা কি আপনার আছে?

সাঈদ খোকন : ২০১৬-কে যখন আমরা পরিচ্ছন্ন বছর হিসেবে ঘোষণা করি তখন আমি বলেছিলাম, ‘পরিচ্ছন্ন শহর, পরিচ্ছন্ন বসন, পরিচ্ছন্ন নগর, পরিচ্ছন্ন জীবন’। সেখানে আমরা পরিচ্ছন্নতা ধারণায় ব্যাপকতা নিয়ে এসেছিলাম। তা হলো আমাদের মনোজগতের পরিবর্তন। আমাদের মনোজগৎ এবং চিন্তাজগতে যদি পরিচ্ছন্নতা না আনতে পারি, সুস্থতা ফিরিয়ে না আনতে পারি তাহলে আসলে পরিচ্ছন্ন জীবন কিংবা পরিচ্ছন্ন নগর খুব জটিল। তাই আমরা বলেছিলাম, আমাদের যেসব জিমনেশিয়াম রয়েছে সেই জায়গায় যোগব্যয়াম বা মেডিটেশন (ধ্যান)-এর ব্যবস্থার চিন্তা করব। কিংবা কোনো টিভি চ্যানেলে ব্যায়ামের কোনো একটা প্রোগ্রাম আমরা স্পন্সর করব। আমি মনে করি, মানসিক ও শারীরিক সমন্বয় ঘটিয়ে একটা সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্যে মেডিটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সর্বশেষ খবর