বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাইরের না, ঘরের শত্রু বিভীষণ

পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ এভাবে এগিয়ে যাবে, এটা অনেকে নেমে নিতে পারে না। আমাদের শত্রু বাইরের নয়, ঘরের শত্রুই বিভীষণ। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। গতকাল দুপুরে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭-এর দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আগত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিগত সময়ে সহিংস আন্দোলন ও জঙ্গিবাদ সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এ ধরনের চ্যালেঞ্জ আরও মোকাবিলা করতে হবে। আমার সব সময় চিন্তা হয়, যখনই বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকে, স্বস্তিতে থাকে, উন্নতি হয়, তখনই যেন ষড়যন্ত্র আরও বেশি শুরু হয়। তারা ২০১৩, ১৪, ১৫-এর মতো আবারও কিছু করবে এমন আশঙ্কা থেকেই যায়। আবার তারা আঘাত করবে বা চেষ্টা করবে। শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। হ্যাঁ, বিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু ওই প্রশংসা শুনে মন গলা আমার স্বভাব নয়। সেখানে সন্দেহের কিছু আছে কি না, এটা আমাদের দেখতে হবে। ১৯৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় থেকে অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে, তাদের কাছে ক্ষমতাটাই সব। দেশ গোল্লায় যাক। কীভাবে দেশের ক্ষতি করবে, সেই চিন্তায় তারা থাকে। জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা ঘটনার পর কোনো এক দেশের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ছিল— এ ঘটনা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়েছিল। কিন্তু আমরা সেটা পারলাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। তাতে মনে হলো, কেউ কেউ খুশি হতে পারল না। এ রকম হবে, আমরা তাদের কাছে আকুতি করব, অমুকের কাছে চাইব, এটা চাইব। কিন্তু আমরা বাঙালি, এখনো তারা বুঝতে পারেনি যে আমরা পারি। হলি আর্টিজানে নিহত পুলিশ সদস্যদের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুজন পুলিশ জীবন দিয়ে গেছে। কিন্তু তারা অনেক মানুষকে বাঁচিয়ে গেছে, দেশের সম্মান বাঁচিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে কর্তব্যবোধ যে, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আপনারা দায়িত্ব পালন করেছেন। আইনশৃঙ্খলা যেন সুন্দর থাকে, সেদিকে নজর দিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন  শেখ হাসিনা। সন্ত্রাস জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে জনগণকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ মূল শক্তি। জনগণের মাঝে একটা সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, মিথ্যা কথা বলে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের এখান থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে, এটা কখনো গ্রহণযোগ্য না। প্রতিটি এলাকায় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে হবে। এমপি মনজুরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সোচ্চার না হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোটখাটো ঘটনা হলেই দেখি হাউকাউ শুরু হয়ে যায়। একজন এমপিকে হত্যা করার পর কোনো মানবাধিকার সংগঠন বা কেউ এ ব্যাপারে কোনো শব্দ করে না। যারা পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে হত্যা করল, মসজিদে আগুন দিল, মানুষ পোড়াল, তাদের বিরুদ্ধেও অত বেশি সোচ্চার হতে দেখি না। গাইবান্ধায় এমপি হত্যাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার বাসা থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কেন পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়া হলো? তার বিরুদ্ধে একটা অপবাদ দিয়ে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র তার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হলো। মনে হলো একেবারে পরিকল্পিতভাবে ছেলেটাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হলো। শেখ হাসিনা বলেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ থেকে শুরু করে সাঘাটা— এসব এলাকায় ২০১৩ সালে চারজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন, রেল লাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা যেখানে ঘটেছিল, সেখানে একজন এমপির নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে কোন পত্রিকায় কী লিখল, সেটা দেখে, সঠিক খবর না নিয়ে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলো? যার জন্য একজন এমপিকে জীবন দিতে হলো। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রসচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর