বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুদক, দূতাবাস ও বিভিন্ন সংস্থায় পদায়ন চায় পুলিশ

সাখাওয়াত কাওসার

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাসপোর্ট অধিদফতর, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন সংস্থায় পদায়ন চেয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন দাবি করেছে তারা। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব সংস্থা বিভিন্নভাবেই পুলিশি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে সাধারণ মানুষেরই ভোগান্তি কমবে। একই সঙ্গে আরও কয়েকটি ট্রেনিং একাডেমি ও পুলিশ ব্যারাক, পুলিশ মহাপরিদর্শকের পদক চার তারকায় উন্নীতকরণ, গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদমর্যাদার আরও কয়েকটি অতিরিক্ত আইজিপির পদ সৃষ্টির দাবি করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার চাওয়ার আগেই অনেক কিছু দিয়েছে পুলিশকে। পর্যায়ক্রমে অপারেশনাল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো হবে। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের এসব দাবির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আসেনি। সব প্রস্তাব লিখিত আকারে জমা দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বৈঠকের সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে পুলিশ কর্মকর্তারা ছাড়াও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ। পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ দীর্ঘদিনের দাবি পুলিশের। তবে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। দুটি বিভাগেই অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তার পদায়ন করা হলে পুলিশের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে আরও গতিশীলতা আসবে। জঙ্গিবাদ দমনে কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে পুলিশবাহিনীর পৃথক ইউনিট করার দাবি করেন তিনি। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে পুলিশ সদস্য সংযুক্ত করার দাবি করে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের দূতাবাসেই পুলিশ সদস্য অ্যাটাশে থাকেন। নিজ দেশের বাইরে থাকা নাগরিকদের নানা সমস্যার বিষয় সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন তারা। এ কারণে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নানা সমস্যা দেখার জন্য পুলিশ কর্মকর্তা অ্যাটাশে রাখার দাবি করেন তিনি। এর বাইরেও পুলিশের যানবাহন সমস্যার কথা তুলে ধরেন এই কর্মকর্তা।

পুলিশের জন্য অন্তত আরও চারটি ট্রেনিং সেন্টার দরকার বলে উল্লেখ করেন সদর দফতরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হলেও মাত্র চারটি ট্রেনিং সেন্টার দিয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ট্রেনিং সেন্টারের প্রধানের পদ অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক থেকে উপমহাপরিদর্শক মর্যাদার করা উচিত বলেন তিনি। ‘গ্রেড-১’ ও ‘গ্রেড-২’ পদমর্যাদার অতিরিক্ত আইজিপির পদ বাড়ানোর দাবি করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, আইজিপি পদে নিয়োগ পাওয়ার পরও সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এ বিষয়টি যেন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। একই সঙ্গে পুলিশপ্রধানের পদটি তিন তারকা থেকে চার তারকা করার দাবি করেন তিনি। স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ এবং আরও অতিরিক্ত আইজিপির পদ সৃষ্টির কথা তুলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাত বছর ধরেই আমি ডিআইজি হিসেবে কর্মরত আছি। দেশের সবচেয়ে বড় বাহিনীর ওপরের দিকে আরও পদ সৃষ্টি না হলে হয়তো ডিআইজি হিসেবেই অবসরে যাওয়া লাগবে।’ প্রশাসন ক্যাডারের মতো করে সুপার নিউমেরারি পদ সৃষ্টির দাবি জানান তিনি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, উগ্রপন্থায় বিশ্বাসীদের ‘ডি-র‌্যাডিকেলাইজেশন’ করার জন্য দেশব্যাপী কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটি) রাখা উচিত। একই সঙ্গে লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ এভাবে এগিয়ে যাবে, এটা অনেকে মেনে নিতে পারে না। আমাদের শত্রু বাইরের নয়, ঘরের শত্রুই বিভীষণ।’ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার ও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

গাজীপুরের পুলিশের সুপারের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশের পুলিশ কী করবে? সমস্যা সমাধান তো সে দেশের পুলিশকেই করতে হবে।’

ডিএমপি কমিশনার ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের কমিশনারের দাবিগুলোর আংশিক উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গ্রেড-১ পদ তো আগেই দেওয়া হয়েছে। এখনো বাস্তবায়ন হয়নি এ বিষয়টি আমাকে আগে জানাননি কেন।’

১৯৫৬ সালের ৯ জুন পাকিস্তানের ডন পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৎকালীন পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের। তবে তখন ২২ জন সচিবের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের কেউ ছিল না। ৪২ জন যুগ্ম-সচিবের মধ্যে এ দেশের ছিল আটজন। উপসচিব পদমর্যাদার ৩২৫ জন কর্মকর্তার মধ্যে এ দেশের ছিল মাত্র ৫০ জন। সামরিক বাহিনীতে কোনো মেজর জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছিল না। কর্নেল ছিল মাত্র একজন। লে. কর্নেল ছিল দুজন। তবে পুলিশের মান উন্নয়নের জন্য পর্যায়ক্রমিকভাবে উন্নত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। অপারেশনাল ও লজিস্টিক সুবিধা বাড়ানো হবে।

জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কোনো এক দেশের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ছিল, এ ঘটনা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়েছিল। কিন্তু আমরা তা পারলাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। তাতে মনে হলো, কেউ কেউ খুশি হতে পারল না। এ রকম হবে, আমরা তাদের কাছে আকুতি করব, অমুকের কাছে চাইব, এটা চাইব, ওটা চাইব। কিন্তু আমরা বাঙালি, এখনো তারা চিনতে পারেনি যে আমরা পারি।’

সন্ত্রাস, জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে জনগণকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ মূল শক্তি। জনগণের মধ্যে একটা সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, মিথ্যা কথা বলে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের এখান থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর