বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

যেভাবে কাজ করবে সার্চ কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

যেভাবে কাজ করবে সার্চ কমিটি

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির হাতে সময় আছে মাত্র ১২ দিন। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের সুপারিশ পেশ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি সে তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।

দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সার্চ কমিটির সুনির্দিষ্ট কোনো কার্যপদ্ধতি নেই। তবে তারা প্রথম বৈঠকেই কার্যপদ্ধতি ঠিক করে নিতে পারেন। সুপারিশ চূড়ান্ত করতে কমিটির পাঁচ-ছয়টি বৈঠক করতে হতে পারে। সার্চ কমিটি তাদের কাজের সুবিধার্থে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সম্ভাব্য নাম চাইতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারের জন্য দুটি করে নাম দেওয়ার কথা বলা হতে পারে।

সার্চ কমিটি প্রত্যেক সুপারিশকৃত ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্তসহ বিস্তারিত পাঠানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সময় নির্দিষ্ট করে দিতে পারে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো নাম সুপারিশ করে তালিকা পাঠাবে কিনা তা তাদের সিদ্ধান্ত। গত নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাইলেও জাতীয় সংসদে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নাম পাঠায়নি। তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ তাদের সুপারিশ করা তালিকা সার্চ কমিটিতে পাঠিয়েছিল।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদাধিকারবলে সার্চ কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে সার্চ কমিটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব এবং বাছাই করা অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের তালিকা সংগ্রহ করে নিতে পারে। একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের একটি তালিকা নেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি সার্চ কমিটি নিজেদের বিবেচনায়ও নাম সংগ্রহ করতে পারে। সার্চ কমিটি চূড়ান্তভাবে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পাঠাবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ প্রতিটি পদে তারা দুজনের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রমতে, সার্চ কমিটির সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের হাতে দেওয়া হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে পারেন। তারপর এই সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করেন। এবার দ্বিতীয়বারের মতো সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে।

সংবিধানে নির্দেশনা থাকলেও নির্বাচন কমিশন গঠনে এ-সংক্রান্ত কোনো আইন নেই। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলীসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।’ সংবিধানের এই ধারায় নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারের কথা বলা হলেও সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দান করিয়াছেন কিনা এবং করিয়া থাকিলে কী পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।’ বঙ্গভবনের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এবার একজন নারী নির্বাচন কমিশনারের দাবি তুলেছে। এ দাবি রাষ্ট্রপতি আমলে নিতে পারেন বলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাই এবারের নতুন নির্বাচন কমিশনে প্রথমবারের মতো একজন নারী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেতে পারেন। এ ছাড়া একজন শিক্ষাবিদকে নির্বাচন কমিশনার করা হতে পারে। নির্বাচন কমিশন আধাবিচারিক প্রতিষ্ঠান বলে বরাবরের মতোই একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা জেলা জজ নির্বাচন কমিশনার হিসেবে থাকবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর