শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই বছরের মহাপরিকল্পনা

সরকার থাকবে দৃশ্যমান উন্নয়নে । দলীয় সাংগঠনিক সক্রিয়তা ৩০০ আসনে

রফিকুল ইসলাম রনি

দুই বছরের মহাপরিকল্পনা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই বছরের মহাপরিকল্পনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর একদিকে সরকারের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প দৃশ্যমান করা, উন্নয়নচিত্র দেশের সর্বস্তরের মানুষকে জানানো এবং তাদের কাছে ভোট চাওয়া। অন্যদিকে সারা দেশে সংগঠনকে সংগঠিত করা এবং অন্তঃকোন্দল কমিয়ে আনা এবং সর্বশেষ জেলায় জেলায় মহাসমাবেশ করে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করা। এ দুই বছরে ৩০০ নির্বাচনী আসন জুড়েই থাকবে সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞ। প্রতিটি সংসদীয় আসনে দলীয় এমপিদের ‘জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি’ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করে দিয়েছেন। এ সফরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে প্রাথমিক জরিপ চালানো হচ্ছে।

দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক মেগা প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। পাশাপাশি ছোটখাটো অনেক প্রকল্পের কাজও চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ প্রায় শেষ। এখনো কিছু বাকি আছে। গত বছর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জঙ্গিবাদ। তাও নির্মূলের পথে। সরকারের সাত বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তালিকা নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের পক্ষে জোয়ার তৈরি করাই মূল লক্ষ্য। সাধারণ মানুষের দোরে দোরে গিয়ে উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চাওয়া হবে। দলটির নেতারা এ জন্য সময় নষ্ট না করে এখন থেকেই পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। ২০১৭ সাল ক্ষমতাসীনদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বা ২০১৯ সালের প্রথমেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে কারণে এখন শুধু উন্নয়ন ও সংগঠনের কাজেই মনোযোগ দেওয়া হবে বলে তারা জানিয়েছেন। সরকারের ১০টি মেগা বড় প্রকল্প চলছে। এ কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই মনিটরিং করছেন। এসব মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, পদ্মা রেলসেতু সংযোগ এবং কক্সবাজার-দোহাজারী-ঘুনধুম রেলপথ প্রকল্প। এ ছাড়া   অনেক দৃশ্যমান প্রকল্পের কাজ আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সম্পন্ন করা হবে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক বাধা-প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দেশজুড়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেয়েছে সরকার। জঙ্গিবাদী তত্পরতা দমন ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বিগত সময়ের চেয়ে জনমত এখন আবার সরকারের দিকে। এজন্য আওয়ামী লীগ ও সরকারের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী ধরে রেখেই নির্বাচনে যাবে দলটি। এজন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সংগঠনের দিকে। ইতিমধ্যে খুলনা, যশোর, লক্ষ্মীপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সাংগঠনিক সফর শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে তিন দিনের সাংগঠনিক সফরে আজ উত্তরাঞ্চল যাচ্ছে দলের একটি টিম। আজ বগুড়ায় জনসভা, আগামীকাল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দুর্বৃত্তের হাতে নিহত এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটনের স্মরণে শোকসভা এবং রবিবার রংপুরে বিভাগীয় কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রতিনিধি দলে থাকছেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ। দলের নীতিনির্ধাকরা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রিয়তা জরিপ করা হচ্ছে। ৩০০ আসনের প্রতিটিতে চারজন করে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা করা হচ্ছে। সরকারের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি দলের তিনটি টিম এ জরিপ কাজ করছে। ওবায়দুল কাদের দলীয় এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। নিয়মিত থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মিসভা এবং ছয় মাস পরপর নির্বাচনী এলাকায় ‘জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার ও দলের আগামী দুই বছরের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিগত সাত বছরে ব্যাপক উন্নয়নকাজ হাতে নিয়েছে। অনেক প্রকল্প ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ১০টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। অন্য প্রকলল্পগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এগুলো দ্রুত শেষ করা, সরকারের অর্জন ও উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে নিয়ে যাওয়া, নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া এবং জনমত সৃষ্টি করাই হবে আমাদের অন্যতম কাজ।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুই বছরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই চেষ্টা করব। যেসব উন্নয়নকাজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলোর মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাবার চেষ্টা করব। জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইব। আগামী নির্বাচনে কীভাবে জয়ী হওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাব।’ এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দুই বছর মেয়াদি নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’ দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, তার দল উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘চলতি বছরে জনগণের সামনে আমরা উন্নয়নের মহাযজ্ঞ তুলে ধরে ভোট চাইতে শুরু করছি। এমনকি দলীয় এমপি ও নেতা-কর্মীদের একই নির্দেশনা দেওয়া হবে।’ আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, জেলাগুলোয় সম্মেলন হলেও কিছু কিছু উপজেলা-ইউনিয়নে এখনো সম্মেলন বাকি রয়েছে। এসব সাংগঠনিক ইউনিটিতে সম্মেলন শেষ করা হবে। যেখানে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে সেগুলো নিরসন করা হবে।

 তিনি বলেন, ‘দলের ভিতর অনুপ্রবেশকারী বা দলের নাম ভাঙিয়ে জনবিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত তাদের চিহ্নিত করে প্রথমে সতর্ক করা হবে। এতে কাজ না হলে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর