শিরোনাম
শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার পুলিশ পেটাল এটিএন নিউজের রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানকে

শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদ বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার পুলিশ পেটাল এটিএন নিউজের রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানকে

কোনো কারণ ছাড়াই বিনা উসকানিতে পুলিশ নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে এটিএন নিউজের সাংবাদিক ঈশান বিন দিদার ও ক্যামেরাম্যান আবদুল আলিমকে। গতকাল তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা হরতাল চলাকালে রাজধানীর শাহবাগে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্য পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও সাংবাদিকদের রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেননি। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদ মণ্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাংবাদিকরা বলছেন, গত কিছু দিন ধরে অকারণে  সাংবাদিকদের পেটাচ্ছে পুলিশ। কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে পুলিশ। পুলিশের এমন আচরণে সাংবাদিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অতি উৎসাহী কিছু সদস্যের আচরণে পুলিশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকালে তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সুন্দরবন বাঁচানোর হরতালে বিনা উসকানিতে পুলিশ নেতা-কর্মীদের ওপর কাঁদুনে গ্যাস ও গরম পানি ছোড়ে। এরপর দফায় দফায় তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের একজনকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাচ্ছিল। তার ছবি ও ভিডিও নেওয়ার চেষ্টা করলে সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় পুলিশ। প্রথমে ক্যামেরাপারসন আবদুল আলিমের ওপর চড়াও হয়। বাধা দিতে গেলে রিপোর্টার ঈশান দিদারকেও বেধড়ক মারধর শুরু করে। পুলিশ তাদের দুজনকেই মাটিতে ফেলে কিল-ঘুষি, বুট দিয়ে লাথি ও লাঠি দিয়ে পেটায়। পুলিশের এমন নির্মম আচরণে সবাই স্তম্ভিত হয়ে যান। পরে সাংবাদিকরা হামলার সঙ্গে জড়িত ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করেন। এটিএন নিউজের বার্তা সম্পাদক সারওয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের হামলায় রিপোর্টার ঈশান দিদার ডান পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। ক্যামেরাপারসন আবদুল আলিমের চোখের ওপরের অংশ কেটে গেছে। তার সঙ্গে থাকা ভিডিও ক্যামেরা ভেঙে গেছে। দুজনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় এটিএন নিউজের উপ-ব্যবস্থাপক মোশররফ আলম সিদ্দিকী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন। এটিএন নিউজের এসোসিয়েট হেড অব নিউজ প্রভাষ আমিন বলেন, আমাদের ক্যামেরাম্যান বা রিপোর্টার যদি বেআইনি কিছু করে থাকে, পুলিশ তাদের আটক করতে পারতো। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় থানার ভিতরে নিয়ে ২০/৩০ জন মিলে ২ জন নিরস্ত্র সাংবাদিককে পিটিয়েছে। কেন? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্যই চাই। শুধু লোক দেখানো ক্লোজ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জড়িত বাকি পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন—রমনা বিভাগের এডিসি নাবিদ কামাল শৈবাল, এডিসি এইচ এম আজিমুল হক ও এসি রমনা ইহসানুল হক। আগামী দুই কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, অতি উৎসাহী তিন পুলিশ কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রে গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে আশুলিয়া থানা পুলিশ বাদী হয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করে। এর কিছুক্ষণ পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় তাকে দুই দফায় তিন দিন রিমান্ড নিয়েছে পুলিশ। আরও তিন মামলায় ২১ দিন রিমান্ড চেয়েছিল পুলিশ। আদালত রিমান্ড নাকচ করলেও এক মাসেরও বেশি সময় বিনা বিচারে কারাগারে আছেন সাংবাদিক নাজমুল হুদা।

সর্বশেষ খবর