শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘ভয়ঙ্কর’ মন্ত্রিসভা ট্রাম্পের

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা

প্রতিদিন ডেস্ক

ভয়ঙ্কর মার্কিনি জাতীয়তাবাদী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়ে বসেছেন প্রতিবেশী মেক্সিকোর সঙ্গে দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত দেয়াল তৈরি করবেন। যার ব্যয়ভার বহন করতে হবে মেক্সিকোকে। ফলে নানা কারণে শুরু থেকেই ব্যাপক সমালোচনার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্টের কাজ শুরু করেছেন এই ধনকুবের। শুধু কি তিনি, সমালোচনার ফোয়ারা বইছে তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়েও। ইতিমধ্যে ১৫ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেছেন ট্রাম্প। যেখানে লাতিন বংশোদ্ভূত  কোনো ব্যক্তির ট্রাম্পের মন্ত্রিপরিষদে জায়গা হয়নি। ট্রাম্পের মন্ত্রিপরিষদে   সাবেক জেনারেল রয়েছেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে জেনারেল (অব.) জেমস ম্যাটিস এবং হোমল্যান্ডমন্ত্রী পদে জেনারেল (অব.) জন এফ কেলি মনোনীত হয়েছেন। এখন ট্রাম্পের মন্ত্রিপরিষদ যা দাঁড়িয়েছে তা হলো— রেক্স টিলারসন (পররাষ্ট্র), স্টিভেন মুচিন (অর্থ), জেমস ম্যাটিস (প্রতিরক্ষা), জেফ সেশনস (আইন), রায়ান জিনকে (স্বরাষ্ট্র), সনি পারডু (কৃষি), উইলবার রস (বাণিজ্য), অ্যান্ডরু পুজডার (শ্রম), টম প্রাইস (স্বাস্থ্য), বেন কারসন (আবাসন), অ্যালাইন চাও (পরিবহন), রিক প্যারি (জ্বালানি), বেটসি ডিভোস (শিক্ষা), ডেভিড শুলকিন (সেনাকল্যাণ), জন এফ কেলি (হোমল্যান্ড)। কিন্তু এই মন্ত্রিপরিষদকে নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্টের মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে কিছু সমালোচনা হয়েই থাকে। কিন্তু ট্রাম্পের মন্ত্রিসভাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইতিহাসে সর্বনিকৃষ্ট’ মন্ত্রিসভা বলে ওয়াশিংটন  পোস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়। আর মার্কিন পত্রিকা ‘স্কয়ার’ বলেছে, গত দেড়শ বছরে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মন্ত্রিসভা তৈরি করেছেন ট্রাম্প। এবারের মার্কিন মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্যই ধনকুবের ব্যবসায়ী বা সেনাবাহিনীর সাবেক  জেনারেল। তাদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাদের অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতা নিয়ে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কাদের নিয়ে কী আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তা জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। জ্বালানিমন্ত্রী রিক প্যারি : তিনি এক সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি দফতরই তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কী ভাগ্য, তাকে সেই মন্ত্রণালয় সামলাতে হবে। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র এই মন্ত্রণালয়ে একজন বিজ্ঞানীকে মনোনয়ন দিয়ে থাকে। যেমন ওবামা প্রশাসনের জ্বালানিমন্ত্রী আর্নেস্ট মোনিজ ছিলেন একজন শ্রদ্ধাভাজন পরমাণু পদার্থবিদ। বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট জ্ঞান নিয়েই এই মন্ত্রণালয়ে আসেন তিনি। কিন্তু প্যারির এ ধরনের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী টম প্রাইস : তিনি একজন চিকিৎসক। কিন্তু তার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। গত বছর চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুতকারক একটি কোম্পানির শেয়ার কেনেন। পরে সেই কোম্পানির জন্য লাভজনক একটি আইন কংগ্রেসে প্রস্তাব করেন রিপাবলিকান পার্টির এই কংগ্রেসম্যান। সম্প্রতি বিদেশি একটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বেটসি ডিভোস : প্রেসিডেন্টের অভিষেক নিয়ে এই নারীমন্ত্রী যে টুইট করেন তা ব্যাকরণগতভাবে ভুলেভরা। তা নিয়ে গোটাবিশ্বে ব্যাপক হাস্যরস হয়েছে। তিনি একাধারে প্রচুর অর্থেরও মালিক। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। শ্রমমন্ত্রী অ্যান্ডরু পুজডার : যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে বিরুদ্ধ মনোভাব পোষণের জন্য অ্যান্ডরু পুজডার আলোচিত। আর তাকেই শ্রমমন্ত্রী হিসেবে নিয়েছেন ট্রাম্প। একটি চেইন ফাস্টফুড কোম্পানির মালিক পুজডার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর বিরোধী। শুধু তা-ই নয়, তার  কোম্পানির বিরুদ্ধে কর্মচারী ঠকানোর অভিযোগ রয়েছে।

গৃহায়ণমন্ত্রী বেন কারসন : ট্রাম্প একজন আবাসন ব্যবসায়ী। কিন্তু যাকে ওই বিভাগে মন্ত্রী বানিয়েছেন সেই বেস কারসনের গৃহায়ণনীতি বিষয়ে কারসনের ন্যূনতম ধারণা  নেই।

বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস : ট্রাম্প তার বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে উইলবার রসকে মনোনীত করেছেন। তিনি একজন কোটিপতি ব্যবসায়ী। তার বাড়িতে কাজ করা বেশ কিছু কর্মচারীকে তিনি কোনো কাগজপত্রই দেননি বলে সম্প্রতি তথ্য বেরিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রায়ান জিনকে : রিপাবলিকান জিনকে নেভি সিলের সাবেক সদস্য। চাকরিজীবনে আর্থিক অনিয়ম করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন : তিনি একজন তেল ব্যবসায়ী। সরকারি দায়িত্ব বা কূটনৈতিক বিষয়ে তার কোনো অভিজ্ঞতা  নেই। তবে তার তেলসমৃদ্ধ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস : তিনি একজন সাবেক জেনারেল। যুদ্ধপ্রীতির জন্য তিনি ‘যুদ্ধবাজ সন্ন্যাসী’ হিসেবে দুর্নাম কুড়িয়েছেন। তিনি ‘ম্যাড ডগ’ হিসেবে পরিচিত। যদিও ট্রাম্প তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের ‘ইতিহাসের সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, হোয়াইট হাউস।

সর্বশেষ খবর