শিরোনাম
শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
মারমুখী পুলিশ, গুলি

সুন্দরবন রক্ষার হরতালে শাহবাগ রণক্ষেত্র

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

সুন্দরবন রক্ষার হরতালে শাহবাগ রণক্ষেত্র

সুন্দরবন রক্ষায় ডাকা হরতালের সমর্থনে গতকাল রাজপথে নামে বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় তাদের ওপর গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সুন্দরবনের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্প বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে গতকাল ঢাকা মহানগরে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। এ সময় শাহবাগ এলাকায় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। ভোর ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত আট ঘণ্টায় উভয় পক্ষে অন্তত ২৫ দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের টিয়ার শেল, জলকামান ও রাবার বুলেটের আঘাতে ১০ জন আহত হন। গ্রেফতার করা হয় পাঁচজনকে। জাতীয় কমিটি দাবি করছে, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা হরতাল পালন করতে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা গতকাল ভোর ৬টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে জড়ো হয়। পরে সেখান থেকে তারা হরতাল সমর্থনে মিছিল শুরু করে। মিছিলটি ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের বাধা অতিক্রম করে শাহবাগের দিকে রওনা দেয় হরতাল সমর্থকরা। এরপর মিছিলটি পাবলিক লাইব্রেরির সামনে গেলে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় হরতাল সমর্থকরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে পুলিশ জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর জলকামান ও রাবার বুলেটও নিক্ষেপ করে। এতে হরতাল সমর্থকরা পিছু হটে এবং চারুকলা অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরা ছুড়ে মারে এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কিছুক্ষণ পর বিক্ষোভকারীরা আবারও শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এভাবে থেমে থেমে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে শাহবাগ থানার সামনে থেকে টিএসসি পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সৃষ্টি হয় ভীতিকর পরিবেশ। এ সময় ঢাকা মেডিকেলগামী রোগী ও অ্যাম্বুলেন্সকে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। তবে শাহবাগ মোড় হয়ে যান-চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এদিকে সংঘর্ষ চলকালে চারুকলা অনুষদের সামনে ‘রামপাল চুক্তি ছুড়ে ফেলো, সুন্দরবন রক্ষা করো’ শীর্ষক এক সমাবেশ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। সমাবেশে জোট নেতা ইমরান হক রুম্মন বলেন, ‘আমরা একে একে হাসপাতালে যাব; রাবার বুলেট বুকে নেব; তবু সুন্দরবন দেব না। আমাদের দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ সুন্দরবন রক্ষার জন্য সমর্থন জানিয়েছে। সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের এ আন্দোলন ৯৯ ভাগ বনাম ১ ভাগ মানুষের আন্দোলন। গরিব মানুষের টাকায় কেনা রাবার বুলেট আমাদের বুকে মেরেছে। আমরা মরে যাব তবু সুন্দরবন দেব না।’ পুলিশের হামলায় আহতরা হলেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, ছাত্রফ্রন্টের নাসির উদ্দিন প্রিন্স, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার, সাধারণ সম্পাদক জি এম জিলানী শুভ, বেসরকারি ইউনিটের কর্মী জয় বণিক, আজিজুল হক কণক, লাবণী মন্ডল, সৈয়দ ফরহাদ ও মিজানুর রহমান। এ সময় কালের কণ্ঠের ফটোসাংবাদিক শেখ হাসানও আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার আন্দোলনকারীরা হলেন ছাত্র ইউনিয়ন কলা ভবনের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিব মাহমুদ আশিক, মিজান, মাহতাব, তপু ও জুয়েল। এদিকে হরতাল সমর্থকরা পল্টন মোড় থেকে তোপখানা সড়ক বন্ধ করে দেয়। মিরপুরেও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে হরতাল সমর্থকরা ব্যারিকেড তৈরির চেষ্টা করে। তবে পুলিশি বাধায় প্রধান রাস্তায় পিকেটাররা অবস্থান নিতে পারেননি। পল্টন এলাকায় হরতাল সমর্থকরা কয়েক দফায় দফায় মিছিল করে।

প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ : তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেছেন, হরতালে সহিংস আচরণ থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে, সরকারের নৈতিকতার পরাজয় হয়েছে। কারও পায়ের নিচে মাটি থাকলে এবং যুক্তি গ্রহণযোগ্য হলে সহিংস হওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সরকার আমাদের ওপর সহিংস হয়েছে। সরকার মনে করে, কেউ যদি প্রতিবাদ করে বসে তাহলে সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে, সে কারণে প্রতিবাদ দেখলেই হামলা চালায়। সুন্দরবন বিনষ্টকারী রামপাল বিদ্যুেকন্দ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাত বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। শুধু সুন্দরবন রক্ষার নয়, আমাদের আন্দোলন দেশ রক্ষার আন্দোলন। সুন্দরবন নিয়ে সরকারের যুক্তি কেউ বিশ্বাস করে না।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বানে হরতাল কর্মসূচি শেষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। হরতালে দফায় দফায় পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় কমিটি। এ ছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে রাজপথে অবস্থান এবং ১১ মার্চ খুলনা মহানগরীতে মহাসমাবেশেরও ঘোষণা দিয়েছে তারা। এতে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশারেফা মিশু প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ খবর