রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

টার্গেট নিরপেক্ষ ইসি

চ্যালেঞ্জ ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি পাওয়া, ৩১ রাজনৈতিক দলের কাছে পাঁচটি করে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

টার্গেট নিরপেক্ষ ইসি

রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১ রাজনৈতিক দলের কাছে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি। নিরপেক্ষ ইসি গঠনের টার্গেটে ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গেও আলোচনায় বসবেন কমিটির সদস্যরা। এ ছাড়া বৈঠকে কমিটির কর্মপদ্ধতি নির্ধারণসহ নাম অনুন্ধানের প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে পৌনে দুই ঘণ্টা। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, যে ৩১টি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের ৩১ জানুয়ারি বেলা ১১টার মধ্যে পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে মতামত নেওয়ার জন্য আগামীকাল বিকাল ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বসবেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। তবে ক্লিন ইমেজ ও সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি পাওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, নাম অনুসন্ধানের জন্য সময় অনেক কম। আর নিরপেক্ষ ইসি গঠনের পরামর্শ নিতেই মূলত বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে এ সার্চ কমিটি গঠন করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম প্রস্তাবের দায়িত্ব দেন। তাদের সুপারিশ থেকেই অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। কমিটির অন্য সদস?্যরা হলেন হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহা হিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার। নিয়ম অনুযায়ী, ছয়জনের এ কমিটির তিনজন উপস্থিত থাকলেই বৈঠক করা যায়। সার্চ কমিটির কার্যপরিধি ও কর্মপদ্ধতিতে অন্তত একজন নারীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে দুজনের নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। যাতে স্পষ্ট হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক এ সংস্থাটিতে একজন নারীকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গত বছর ১৮ ডিসেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপ শেষ হয় চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি। এই সময়ে রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। এ ছাড়া ২০১২ সালের সার্চ কমিটি ২২ জানুয়ারি গঠনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিল। তার মধ্য থেকে পাঁচজনকে ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপ্রধান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল কমিটির কর্মপদ্ধতি কী হবে তা নির্ধারণ করা। কমিটির প্রথম বৈঠকে দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর কাছে নাম চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। পাঁচটি করে নাম ৩১ জানুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধে?্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন ও বিধি) কাছে জমা দিতে হবে। আর সোমবার বিকালে সার্চ কমিটির বৈঠকের জন্য ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের একটি তালিকাও করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শফিউল আলম জানান, হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.), সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) নূরুল হুদা, আইনজীবী সুলতানা কামাল, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশনের নাম সুপারিশের জন্য নির্ধারিত ১০ কার্যদিবস, অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সার্চ কমিটির সব কার্যক্রম শেষে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন কমিশন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

কখন বিদায় বর্তমান ইসির : ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। সিইসি ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ অফিস করবেন বলে জানায় বর্তমান ইসি ও এর সচিবালয়। পাঁচ বছর আগে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও তিন নির্বাচন কমিশনার ৯ ফেব্রুয়ারি এবং আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগ দিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ ৮ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ণ হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এ টি এম শামসুল হুদা ও একজন নির্বাচন কমিশনার ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যোগ দিলেও বিদায় নিয়েছেন ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৪ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়ে বিদায় নেন ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান ইসির বিদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদায় অনুষ্ঠানের কোনো কর্মসূচি নেই। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সিইসির শেষ অফিস।

সর্বশেষ খবর