নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে সার্চ কমিটির আলোচনায় বসার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা ইসি গঠন নিয়ে সার্চ কমিটির আলোচনায় বসার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এক্ষেত্রে তারা নিরপেক্ষ ইসি গঠনে মতামত দেবেন। গতকাল সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে ইসি গঠন নিয়ে ১২জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাল সোমবার বিকাল ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এই বৈঠক হবে। এ জন্য ১২ বিশিষ্ট নাগরিককে এরই মধ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিশিষ্ট নাগরিকরা জানান, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির গঠিত সার্চ কমিটির সদস্যরা ইচ্ছে করলে নিজেরাই মতামতের ভিত্তিতে নাম প্রস্তাব করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা না করে নাগরিক সমাজের মতামত গ্রহণ করবেন— এটা অত্যন্ত ইতিবাচক। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, সার্চ কমিটি একটি নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ ইসি গঠনে আন্তরিক। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, শুধু বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামতই নয়, সম্ভব হলে সব নাগরিকের মতামত নিয়েও ইসি গঠন করা যেতে পারে। আর সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করে লাভ হবে না, যদি না সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তরিক হয়।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে বিশিষ্টজনের মতামত গ্রহণের সার্চ কমিটির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তারা কারও সঙ্গে কথা না বলে নিজেরাই মতামতের ভিত্তিতে একটা তালিকা প্রণয়ন বা মতামত দিতে পারত। কিন্তু তা না করে কীভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা যায়— সে ব্যাপারে দেশের বিশিষ্টজনদের মতামত গ্রহণ করবেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চেয়েছেন। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ, নতুন ডায়মেনশন। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আস্থাভাজনের নাম দেবে। সুশীল সমাজ সামগ্রিকভাবে কীভাবে নির্বাচন কমিশনকে দেখতে চায়, নির্বাচন কমিশনের সিলেকশন কী হতে পারে— দল নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সে ব্যাপারে মতামত দেবেন। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর নাম এবং সুশীল সমাজের মতামত সার্চ কমিটি ইসি গঠনের কাজ সহজ হবে।তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে কি কি করা দরকার— সেই বিষয়ে মতামত দেব। নির্বাচন গণতন্ত্রকে সুসংহত করার একটা ধাপ মাত্র। তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নির্বাচন করতে গেলে নির্বাচন কমিশনকে কেমন হওয়া প্রয়োজন— সেগুলো তুলে ধরব। আমি যা ভালো মনে করি তা বলে আসব। গ্রহণ করা না করা তাদের ওপর নির্ভর করবে।
সবার মতামত ও সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন হবে, তবে এই কমিশন কী বিতর্কমুক্ত থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, আমি রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলতে পারব না। একজন সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে গণতন্ত্রের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে যা ভালো মনে করি, তা বলে আসব। এরপর যদি কোনো বিতর্ক থাকে তাহলে সেটা সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনের বিষয়। তবে যাদেরকেই কমিশনে নেওয়া হোক, তাদের মধ্যে যদি দেশপ্রেম থঠমশ— তবে রাজনৈতিকভাবে তাদের প্রভাবিত করা যাবে না। তারা নিরপক্ষই থাকবেন।
আপনাদের কাছে ইসি গঠনে নাম চাওয়া হলে নাম দেবেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অন্তত কোনো নাম দেব না। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চেয়েছে, আমি শুধু মতামত দেব।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথমত সার্চ কমিটি বিশিষ্ট নাগরিকের সমাজের বক্তব্য শোনার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ইতিবাচক। এটাকে আরও সম্প্রসারণ করা উচিত। দেশের সব মানুষের কাছ থেকে একটি সিস্টেমের মাধ্যমে মতামত নিতে পারে। এতে সার্চ কমিটি দেশের মানুষের জন্য দুদিন সময় দিলেও দিতে পারেন। এতে যে কোনো নাগরিক তাদের পছন্দের নাম পাঠাতে সুযোগ পেত। এত স্বল্প সংখ্যক মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে ওটা করলেও ভালো হতো। তা হলে বিতর্ক কমে আসবে। মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। নির্বাচন কমিশন গঠনের পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাও বাড়বে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আলোচনায় বসাটাই তো গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। আমি এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছি। তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সব কিছুই ভালো হয়। তিনি বলেন, ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ইচ্ছা থাকতে হবে। তবেই সব কিছু সুন্দর হবে।