রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন ইসি নিয়ে যত কথা নেতাদের

নাম প্রস্তাব করবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন ইসি গঠন ও সার্চ কমিটি নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য অব্যাহত আছে। মন্ত্রীরা বলছেন, সার্চ কমিটি নিয়ে অভিযোগের ভিত্তি নেই। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, যাদের নিয়ে সার্চ কমিটি হয়েছে, তাদের দিয়ে নিরপেক্ষ ইসি গঠন সম্ভব নয়। তবে পাঁচটি নাম প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির ভেতরে এরই মধ্যে আলোচনা চলছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটি নিয়ে অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। রাষ্ট্রপতি গঠিত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির সদস্যদের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপির সমালোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা মন্তব্য করলেন। গতকাল হবিগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে মুহিত আরও বলেন, গঠিত সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ। এ কমিটির সদস্যরা অত্যন্ত জ্ঞানী, গুণী ও ভালো লোক। যারা সার্চ কমিটি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন তারা ‘ভ্রান্ত ও রাবিশ’। এর কোনো ‘ভিত্তি নেই’। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাই বর্তমান সার্চ কমিটিতে তাদের সমর্থন নেই। গতকাল কুমিল্লায় একটি বিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও বিএনপি কর্মীর আওয়ামী লীগে যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মুজিবুল হক বলেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ, আগামী নির্বাচনেও ব্যর্থ হবে। দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আপনারা কোনোভাবেই গণতন্ত্রের ব্যত্যয় ঘটাতে পারবেন না। গণতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচন হবে, গণতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, এ সার্চ কমিটিতে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের দিয়ে নিরপেক্ষ ইসি গঠন সম্ভব নয়। কারণ তারা সবাই আওয়ামী লীগের পছন্দের লোক। ফলে এ সার্চ কমিটি নিয়ে নতুন কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সার্চ কমিটি কী কাজ করবে তা স্পষ্ট। তাই তাদের কাছ থেকে নতুন কিছু আশা করা যায় না। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, মানুষ দেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের আশা করেছিল। কিন্তু সার্চ কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আশা করা যায় না। এতে রাষ্ট্রপতি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার পরও যদি এ সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারে, তাহলে মানুষ বুঝবে, দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তারা কাজ করেছে। গতকাল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

তবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘ধন্য আশা কুহকিনী। আশা করি, অতীতে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না, এমন অবসরপ্রাপ্ত নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়ে ইসি গঠনের জন্য সার্চ কমিটি সুপারিশ করবে। নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে গঠিত গ্রহণযোগ্য সেই নির্বাচন কমিশন জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপহার দেবে।’ এর মাধ্যমেই এ সার্চ কমিটি তার দলীয়করণের বদনাম ঘোচাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে মওদুদ বলেন, “‘জন্ম হোক যথা-তথা, কর্ম হোক ভালো’। আর যদি তা না করে সার্চ কমিটি কোনো বিশেষ দলের ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করে এবং গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন না হয়, তাহলে আমাদের সামনেও আন্দোলনের কোনো বিকল্প থাকবে না। আর তখন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) বলেন, “এ সার্চ কমিটি গ্রহণযোগ্য নয়। এতে বিগত নির্বাচনের আগে গঠিত সার্চ কমিটির ‘রিপিটেশন’ হয়েছে যাদের পারফরম্যান্স ভালো নয়। তারা একটি অসাড় ও অথর্ব ইসি গঠন করেছিল। যে ইসি ৫ জানুয়ারির মতো একটি কলঙ্কজনক জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। কাজেই আশা করব, মহমান্য রাষ্ট্রপতি এ ধরনের সার্চ কমিটি বাদ দিয়ে নতুন করে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এমন একটি ইসি গঠন করবেন, যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সোপান রচনা করবে।” গতকাল সংসদ ভবন এলাকায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী নূরুল হুদার নামাজে জানাজা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “যেসব লোকজন নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের দিয়ে ভালো কিছু হবে বলে কেউ মনে করেন না। কারণ অতীতেও এসব ব্যক্তিই নেতৃত্ব দিয়েছেন সার্চ কমিটিতে। জাতিকে উপহার দিয়েছেন ‘রকিবউদ্দীন মার্কা’ কমিশন, যারা নির্লজ্জভাবে দেশে ৫ জানুয়ারির মতো একটি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করেছে। তার পরও আমরা এ সার্চ কমিটির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নামের তালিকা পাঠানোর প্রস্তাব পাওয়ার পর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। তবে সরকারের মতিগতি ইতিবাচক বলে মনে হয় না। তা ছাড়া জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের নেতিবাচক মন্তব্য দেশ ও জাতিকে ছোট করেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকার তাদের দিয়ে কী ধরনের ইসি গঠন করাবে।” গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর