রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জমিজমা নিয়ে বিরোধে সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক

জমিজমা নিয়ে বিরোধে সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক সংকট

হোসেন জিল্লুর রহমান

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ সামাজিক সংকট তৈরি করছে। দেশে ভূমি বিরোধের কারণে অনেক সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাও ঘটছে। তিনি আরও বলেন, বৃহৎ জনগোষ্ঠীদের মধ্যে ভূমি বিরোধজনিত            সমস্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ৩৬০টি পরিবারের ওপর চালিত এক গবেষণা জরিপে দেখা যায়, ৪১ শতাংশ পরিবারই ভূমিবিরোধ সংক্রান্ত জটিলতার সঙ্গে জড়িত। হোসেন জিল্লুর রহমান গতকাল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের আয়োজনে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘সম্পত্তি অধিকারের সুযোগ : সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষা প্রকল্পের প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করছিলেন। তিনি বলেন, ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের ৫২ শতাংশই ভূমির সীমানা নিয়ে। এ ছাড়া উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধের হার ৪১ শতাংশ। মূলত জনসাধারণের ভূমি আইন বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায়, আইনি জটিলতা ও সামাজিক সংকটের ফলে এসব বিরোধ। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত যেসব বিরোধ দেখা দেয় তার অধিকাংশই সমাধানের বাইরে থেকে যায়। কারণ পরিবারের বেশিরভাগই মামলা বা আইনি জটিলতায় যেতে চায় না। মূল প্রবন্ধে বলা হয় জমিজমার বিরোধ বিষয়ে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা—এই ছয়টি জেলায় গবেষণা জরিপ পরিচালনা করে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)। এই জরিপ বা গবেষণা চলেছিল সেপ্টম্বর ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত। জানা গেছে যে, এতে রাজশাহীর ৪২, নাটোর ৩৫, নওগাঁ ৩৩, দিনাজপুর ৪৬, রংপুর ৫৮ এবং গাইবান্ধা অঞ্চলের ৩১ শতাংশ মানুষ ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের সঙ্গে জড়িত। এদের প্রায় সবাই নানাভাবে সামাজিক সংকটের শিকার। এ ছাড়া রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনিক কাজে দালালদের দৌরাত্ম্য, ভূমির অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞতা, শিক্ষিত হলেও ভূমি আইন ও উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে অনেকের পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও এ কারণে মামলা না করার মনোভাব, ভূমি জরিপে নানা জটিলতা। বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল আলম। এ ছাড়া ‘সম্পত্তি অধিকার সুরক্ষা উদ্যোগ ও এর প্রভাব’ শীর্ষক অপর একটি নিবন্ধ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস জাহান। সম্পত্তি অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে একটি পর্যালোচনা তুলে ধরেন ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির প্রধান সাজেদা ফারিসা কবির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জের পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ।

মেসবাহুল আলম বলেন, প্রান্তিক মানুষের অধিকার রক্ষায় সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিকায়ন করতে শুরু করেছে। এ জন্য প্রায় সব খাত ডিজিটালাইজড হচ্ছে। এর ফলে কাজের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা আসবে। অনুষ্ঠানে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের পরিচালক ফায়কুজ্জামান চৌধুরী এবং বিভিন্ন এলাকার সহকারী ভূমি কমিশনাররা বক্তব্য রাখেন।

সর্বশেষ খবর