মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিম্ন আদালত কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়া দরকার

প্রধানবিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিম্ন আদালত কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়া দরকার

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘নিম্ন আদালত পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, সঙ্গত কারণেই আমাদের বিচার বিভাগের কিছু সমস্যা রয়েছে। এ বিচার বিভাগটাই হলো রাষ্ট্রের সবচেয়ে নেগলেকটেড (অবহেলিত) সেক্টর। আমাদের এখানে ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতি আমরা এখনো করতে পারিনি। এখনো আমাদের রেজিস্ট্রিতে হাজার হাজার কয়েদির রেকর্ড হাতে লিখতে হয়। এমনও কয়েদি আছেন যাকে ছয় মাস কিংবা বছরখানেক পর্যন্ত হাজিরা দিতে হয় না। কারণ ট্র্যাক করা যায় না। এতে অনেক কয়েদির সমস্যার সৃষ্টি হয়।’ গতকাল সকালে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনের আগে সাংবাদিকদের এসব বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি জানান, এর আগে তিনি কাশিমপুর কারাগারে নিজে গিয়ে সেখানকার পরিবেশ প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তার জন্য খুবই মর্মান্তিক হবে যদি বিনা বিচারে কেউ কারাগারে থাকেন। আর তাকে যদি বিচারের সুবিধা দিতে না পারেন। তিনি বলেন, ‘প্রবাদ আছে যে, ১০০ জন অপরাধীকে আমরা ছাড়তে পারি। কিন্তু নির্দোষ একজনকেও আমরা বেঁধে রাখতে পারি না। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’

তিনি আরও বলেন, জজ কোর্ট অনেকটা ঘিঞ্জি পরিবেশে আছে। কর্মচারীদের বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বসেছিলেন এবং তাদের বুঝিয়েছিলেন ম্যাজিস্ট্রেসি কোর্টটি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের বিষয়ে। প্রথমে আইনজীবীরা রাজি হননি, কিন্তু পরে তারা রাজি হন। কোর্ট স্থানান্তর হলে তাতে কারা কর্তৃপক্ষেরও সুবিধা হতো। কয়েদিদের সহজে আনা-নেওয়া করা যেত। প্রধান বিচারপতি বলেন, সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে অবগত। এসবের পরও অজ্ঞাত কারণে ওই এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি কোর্টের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় কয়েদিদের আনা-নেওয়ায় অনেক সময় লাগে। আবার তাদের হিসাব রাখতেও অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ম্যাজিস্ট্রেসি কোর্ট কেরানীগঞ্জে স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এতে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে, গাড়ি সংকুলান হবে এবং কয়েদিদের সহজে আনা-নেওয়া করা যাবে। আর সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। গাজীপুরে এক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাই করা হয়েছে। যাকে পরে ধরাও যায়নি।

তিনি আশঙ্কা করেন যে, পুরান ঢাকায় যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সেখানেও যে কোনো সময় এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে আইজি প্রিজনের প্রতি প্রধান বিচারপতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যেন অপরাধীদের কারাগারের ভিতরে সংশোধন ও স্বাবলম্বী করা যায়। কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা যেন ফের অপরাধে না জড়ান।

পরে তিনি কয়েদিদের উন্নত লাইব্রেরি স্থাপনের জন্য আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন আহমেদের হাতে ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ১ লাখ টাকার বই তুলে দেন। এ সময় ঢাকা জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ও জেলার নেছার আলম উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের কারাগার পরিদর্শনের উদ্দেশ্য জানাতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হন। রাজার কথা না শোনায় তাকে ওই শাস্তি দেওয়া হয়। রাজা তাকে তার পরামর্শক হতে বলেছিলেন। কিন্তু বিচারক বললেন, ‘আমি জনগণের বিচার করি, এ অবস্থায় আমি যদি রাজাকে পরামর্শ দিই, তাহলে জনগণ কী বিচার পাবে!’ এ অপরাধে তাকে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডে বিচার বিভাগকে স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়। এখন অ্যাটর্নি জেনারেলের যে পদটি আছে, তা তখনই সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ পদ সরকার কিংবা রাজাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য। আর বিচারকরা থাকবেন স্বাধীন। আরেকজন প্রধান বিচারপতি ন্যায়বিচার কতটুকু করতে পেরেছেন, তা নিশ্চিত করার জন্য লন্ডনের বাইরে এক শহরের রাস্তার পাশে খোলাভাবে প্রস্রাব করেন। এটি একটি অপরাধ ছিল। এ অপরাধে তিনি জেলের মধ্যে কয়েদি হিসেবে গিয়ে নালা পরিষ্কার করলেন। কয়েদিদের কী সমস্যা তা স্বচক্ষে দেখলেন। এর সাত দিন পর তার পরিচয় প্রকাশিত হলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘কয়েদিদের কী কষ্ট হচ্ছে তা উপলব্ধি করতে না পারলে আমি কীভাবে বিচার করব।’

পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে এসে দুপুর পৌনে ২টার দিকে কারাফটকে সাংবাদিকদের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ভিতরের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর এবং আধুনিক। আমাকে একজন কয়েদিও কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি। তারা বলেছেন, কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে অত্যন্ত সুন্দর ব্যবহার করেন।’

সর্বশেষ খবর