বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভাষাপ্রেমের মধ্যে দেশপ্রেম ফুটে ওঠে

আহমদ রফিক

ভাষাপ্রেমের মধ্যে দেশপ্রেম ফুটে ওঠে

শুরুটা ১৯৪৭ সালের প্রথম দিকে, যখন মুসলিম লীগের শীর্ষ নেতারা বলতে থাকেন যে, হবু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এর লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন জনাকয় বাঙালি মুসলমান দৈনিক পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে। সাংবাদিক-লেখক আবদুল হক তাদের অন্যতম। এভাবে শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা উপলক্ষে বাঙালি-অবাঙালির বাদ-প্রতিবাদ। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২— এই সময়ে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, আন্দোলন প্রধানত বাংলা ভাষার দাবি নিয়ে। বায়ান্নর আন্দোলনে মৃত আন্দোলনের চরিত্র বদল ঘটায়। ভাষাচেতনার বিস্তার ঘটে শুধু ছাত্রসমাজেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে পাকিস্তান-চেতনার সঙ্গে ভাষাচেতনার দ্বন্দ্ব্ব শুরু। পাকিস্তান সরকারের বাংলাবিরোধী একের পর এক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বাঙালিরা লড়াই করেছে। যদিও এ লড়াইয়ের ভিত তৈরি করেছে ছাত্রসমাজ, কিন্তু ঘটনাপরম্পরায় তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ। এ সমর্থনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জোরদার হয়। এরপর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা রক্ষা পায়। ভাষাসংগ্রামের সময় আমার বয়স ছিল ২৩ বছর। তখন এভাবে আমরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজনৈতিক বাধা উপেক্ষা করে মাতৃভাষা রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছি; যারা আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল তাদের উচিত জবাব দিয়েছি; মাতৃভাষার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার বীজ বপন হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাহাত্তরে নতুন সংবিধানমাফিক ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। আর এ বছর আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের ছয় দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও রক্তে ভেজা একুশের চেতনা কিংবা বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বত্র হয়নি। সর্বত্র বাংলা ব্যবহার এবং দেশকে সমৃদ্ধি দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মকে সংগঠিত হতে হবে। আমি মনে করি, বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা যেন ফেব্রুয়ারি মাসকেন্দ্রিক না হয়। ভাষার প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে হবে। ভাষার চর্চাকে বাড়াতে হবে বহুমাত্রিকভাবে। আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে গড়ে দেওয়ার জন্য, ভবিষ্যতের সভ্যতাকে যারা এই গড়ে দেওয়ার গুরুভার কাঁধে তুলে নিয়ে জাতির চেতনার আলো হয়ে পথ দেখিয়ে যাচ্ছেন এবং যাবেন অনাগতকাল। মনে রাখতে হবে, ভাষাপ্রেমের মধ্যে দেশপ্রেম ফুটে ওঠে। লেখক : ভাষাসংগ্রামী, কবি ও গবেষক

সর্বশেষ খবর