বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

তারা হাঁটলেন স্কুল ছাত্রদের ওপর দিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

তারা হাঁটলেন স্কুল ছাত্রদের ওপর দিয়ে

চাঁদপুরের হাইমচরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামালপুরের মেলান্দহে স্কুলের জমিদাতা হেঁটেছেন ছাত্রদের শরীরের ওপর দিয়ে। ছবি : সংগৃহীত

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উৎসবে এক শিক্ষার্থীর পিঠের ওপর দিয়ে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির হেঁটে যাওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে। ঠিক এ অবস্থায় জামালপুরের মেলান্দহে এক জমিদাতা ছাত্রদের কাঁধে চড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

হাইমচরে যিনি হেঁটেছেন তার নাম নূর হোসেন পাটওয়ারী। তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কমিটির প্রধান হয়েছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সৈয়দ সরোয়ার জাহান। আজ থেকে এ কমিটি কাজ শুরু করবে। এদিকে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে বর্বর বলে অভিহিত করেছেন। এসব ছবি ও ভিডিও আপলোড করে এমন কর্মকাণ্ডকে শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে। জানা গেছে, সোমবার নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নূর হোসেন পাটওয়ারী। ছবিতে দেখা গেছে, দুই দল শিক্ষার্থী হাতে হাত রেখে ‘সেতু’ তৈরি করেছে এবং আরেক ছাত্র তার ওপর উপুড় হয়ে শুয়েছে। ছাত্রটির পিঠ দিয়ে বানানো ‘মানবসেতু’র ওপর দিয়ে হাসিমুখে প্রধান অতিথি জুতা পায়ে হেঁটে সফলভাবেই পার হন। ‘শিক্ষার্থীদের অনুরোধে’ তিনি ওই কাজটি করেন বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন এই জনপ্রতিনিধি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির এমন কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষাবিদসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা বেদনাদায়ক, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। একজন জনপ্রতিনিধি কীভাবে এমন অসামাজিক, অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন তা বোধগম্য নয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘সভ্য সমাজে এমন বর্বরতা মেনে নেওয়া যায় না। একজন জনপ্রতিনিধি যদি শিক্ষার্থীদের ওপর দিয়ে জুতা পায়ে হেঁটে যান তবে তার কাছে জাতি আর কীইবা আশা করতে পারে। সত্যি বলতে কি সমাজে জনগণের সঙ্গে অত্যাচারীদের, ক্ষমতাবানদের যে দ্বন্দ্ব চলমান, এটি তারই উদাহরণ।’ তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে এই জনপ্রতিনিধিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস না দেখান।’

আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ফটোফ্রেমে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিনের শিশু মানবসেতু পার হওয়ার ছবি সাঁটানো রয়েছে। এ ছাড়া ৮-১০ বছর আগে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুখেশচন্দ্র প্রধান অতিথি হিসেবে এসে শিশু মানবসেতু পার হয়েছেন, যিনি বর্তমানে একটি মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদে কর্মরত। প্রতি বছরই এমন মানবসেতু তৈরি করা হয় এবং ওই সেতু পার হন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহরাব হোসেন, দেলোয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকজন জানায়, ‘এ বিদ্যালয়টি উপজেলার প্যারেড বা শারীরিক কসরত প্রদর্শনে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। প্রতি বছরই আমরা এমন মানবসেতু তৈরি করি। তারই অংশ হিসেবে সোমবার প্রধান অতিথিকে আমরা মানবসেতু পার হতে আমন্ত্রণ জানাই। তিনি মানবসেতু অতিক্রম করে আমাদের ৫ হাজার টাকা পুরস্কারও দেন।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন জানান, ‘তিনি মানবসেতুতে উঠতে চাচ্ছিলেন না। আমরা অনেক অনুরোধ করার পর উঠেছেন।’

মেলান্দহে কাঁধে চড়লেন জমিদাতা : জামালপুরের  মেলান্দহে শিক্ষার্থীদের কাঁধের ওপর দিয়ে হেঁটেছেন বিদ্যালয়ের জমিদানকারী দিলদার হুসেন প্রিন্স। গত ২৯ জানুয়ারি উপজেলার মাহমুদপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও এক শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটেছে। দিলদার হুসেন প্রিন্সের হাঁটার ছবিটি গতকাল ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, ২৯ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল লতিফ এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল। এ অনুষ্ঠানে স্কাউটসের সদস্যরা ‘প্রতীকী সেতু’ তৈরি করে। সেই ‘মানবসেতুর’ ওপর দিয়ে হেঁটে যান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দিলদার। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন স্কুলের শরীরচর্চার শিক্ষক হাফিজুর রহমান। এ বিষয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. আসালতজ্জামান বলেন, স্কাউট সদস্যরা সেদিন শারীরিক কসরত উপস্থাপন করে। তবে তাদের তৈরি করা মানবসেতুর ওপর দিয়ে প্রিন্স হেঁটে গেছেন কিনা, আমি জানি না। এ ব্যাপারে দিলদার হুসেন প্রিন্স বলেন, শিক্ষার্থীদের কাঁধের ওপর দিয়ে হেঁটেছি। এর বেশি কিছু নয়।

সর্বশেষ খবর