শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ওদের আর ফেরার পথ নেই

পরিবার পরিজন নিয়ে আইএসে, বিমান ও স্থল বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওদের আর ফেরার পথ নেই

বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যারা আইএসে যোগ দিয়েছেন বা সিরিয়া, ইরাকসহ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় গিয়েছেন তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সীমান্তে দায়িত্বরত কর্তাব্যক্তিদের কাছে আইএসে যোগ দেওয়াদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। এমনকি তারা যদি চেহারা পরিবর্তন করে দেশে ঢুকতে চান তাহলে সেটাও তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহারকারী এসব আইএস জঙ্গির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের অবস্থান খুবই কঠোর। তাদের আর দেশে ফেরার কোনো পথ নেই। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়া ও ইরাকে আইএস অধ্যুষিত এলাকায় গিয়েছেন তাদের মধ্যে চিকিৎসক দম্পতি থেকে শুরু করে সরকারের সাবেক সচিবের সন্তান, শিক্ষক, অভিনয়জগতের লোকজনও রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে গিয়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। আবার কেউ কেউ একাও গিয়েছেন। খিলগাঁওয়ের এক চিকিৎসক স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গেছেন। সরকারের সাবেক সচিব ও সাবেক নির্বাচন কমিশনারের এক ছেলে, একজন অভিনেত্রীর স্বামীসহ অন্তত ৬০ জন আইএস আসক্তিতে বাংলাদেশ ছেড়ে সিরিয়া ও ইরাক গিয়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একই পরিবারের ১২ সদস্য, একাধিক তরুণ-তরুণী, জাপানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনায় নিয়োজিত একজন বাংলাদেশি, এক চিকিৎসক দম্পতিসহ আরও অনেকে গিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে যারা আইএসকবলিত এলাকায় গিয়েছেন তাদের অনেকেই পরিবারের সদস্যদের রেখে গেছেন। কিন্তু সিরিয়া-ইরাক যাওয়ার পর তারা আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

তবে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যারা আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া বা ইরাকে গিয়েছেন তারা পরিবার বা পরিবারের বাইরে যোগাযোগ রেখেছেন। তাদের কাছে এর প্রমাণ আছে। ইসলামিক স্টেট নিয়ে আরবিতে লেখা একটি সাপ্তাহিক পুস্তিকার অনুলিপি তারা পেয়েছেন। ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা শিশু বিশেষজ্ঞ খন্দকার রোকন উদ্দীন, তার স্ত্রী নাঈমা আক্তার, দুই মেয়ে এবং এক মেয়ের স্বামী পরিবার এখন আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। কারণ আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও তার পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই। তাহমিদ সাফি ও  সায়মা খান ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল বারিধারার বাসা ছেড়ে যান। মধুচন্দ্রিমায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা বলে তারা বাসা ছেড়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, মালয়েশিয়ায় তিন মাস থাকার পর তারা দুজন আইএসকবলিত এলাকায় চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর ?তাহমিদ মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। কিন্তু এখন আর যোগাযোগ নেই। একই অবস্থা চিকিৎসক আরাফাত রহমান তুষারের। বারিধারা ডিওএইচএসের বাসিন্দা তুষার শুরুর দিকে দেশে যোগাযোগ রাখলেও বর্তমানে কোনো যোগাযোগ নেই। বাংলাদেশ থেকে যারা আইএসকবলিত এলাকায় গিয়েছেন তাদের বাইরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের লুটনের আবদুল মান্নান ও তার পরিবারের ১২ সদস্য রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ পরিবারের সব সদস্য আইএস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে রয়েছেন। এ পরিবার ২০১৫ সালের ১০ এপ্রিল যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসে। তার এক মাস পর ১১ মে ইস্তানবুল হয়ে সিরিয়া পাড়ি দেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। অর্থাৎ এ পরিবার সিরিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেছে। একইভাবে জাপানের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাইফুল্লাহ ওজাকির জাপানে বিয়ে করে সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তিনি শিক্ষকতা করতেন জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাইফুল্লাহ বুলগেরিয়ায় যাওয়ার কথা বলে আইএসে যোগ দেন। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বাংলাদেশ থেকে দুই তরুণকে আইএস-অধ্যুষিত এলাকায় পাচার করেছেন। আর র‌্যাবের নিখোঁজ তরুণদের তালিকায় থাকা বাংলাদেশি দুই ভাই ইবরাহিম হাসান খান ও জুনায়েদ হাসান খান অনেক দিন ধরে সৌদি আরবপ্রবাসী। তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করছিলেন। এদের মধ্যে ইবরাহিম হাসান খান সিরিয়ায় চলে যান। আর জুনায়েদ হাসান খানের অবস্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়া ও ইরাকে আইএসে যুক্ত হয়েছেন তাদের দেশে ফেরত আসার চেষ্টা ঠেকানো এ মুহূর্তে জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ ইরাক ও সিরিয়ার বৃহৎ এলাকা থেকে আইএস যোদ্ধারা পিছু হটছেন। একটা অংশ নিহত হচ্ছেন। এ কারণে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা এখন দেশে ফেরার চেষ্টা করতে পারেন। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যারা গোপনে দেশত্যাগ করে আইএসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে আমাদের কঠোর নজরদারি আছে। তারা কিছুতেই যাতে কোনোভাবেই দেশে ঢুকতে না পারেন সেজন্য বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে তাদের যাবতীয় তথ্য দেওয়া আছে। এর মধ্যে কেউ বাংলাদেশে আসতে চেষ্টা করলে তা যেন সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের জানানো হয় তেমন সিদ্ধান্ত আছে।’ জানা গেছে, আইএসে যোগ দেওয়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও তিন-চার জন বাংলাদেশে ফিরেছেন। এখন তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক। এদের কাউকে আটক করা হয়েছে সীমান্ত দিয়ে ঢোকার সময়। আবার কেউ গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকায় ফেরার পর। এদেরই একজন ডেসকোর সাবেক প্রকৌশলী গাজী কামরুস সালাম সোহান। তিনি ২০১৫ সালের মে মাসে তুরস্ক সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওই সময় তুরস্ক পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। এরপর র‌্যাব তাকে ঢাকায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর